ফ্রান্সজুড়ে ব্যাপক ধর্মঘটের ডাক, দুর্ভোগের আশঙ্কা

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রস্তাবিত সার্বজনীন পয়েন্টভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থাপনায় নাখোশ বিভিন্ন ইউনিয়ন কয়েক বছরের মধ্যে ফ্রান্সজুড়ে সবচেয়ে বড় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2019, 10:18 AM
Updated : 5 Dec 2019, 10:18 AM

দেরিতে অবসর কিংবা কম পেনশন নিতে বাধ্য করার প্রতিবাদে পেশাজীবী ও শ্রমিকদের ডাকা এ ধর্মঘটে ফ্রান্সজুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ধর্মঘটে পুলিশ, আইনজীবী, হাসপাতাল ও বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গে  শিক্ষক এবং পরিবহন  শ্রমিকরাও অংশ নিতে যাচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করলেও তা জনদুর্ভোগ হ্রাসে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারবে না বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

শিল্পখাতের শ্রমিকদের ধর্মঘট বৃহস্পতিবারের পরও চলতে পারে বলে বেশকিছু ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা আভাস দিয়েছেন। পেনশন ব্যবস্থাপনার সংস্কার নিয়ে ম্যাক্রোঁ তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করা না পর্যন্তও এ ধর্মঘট চলতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।

ধর্মঘটের পক্ষে ৬৯ শতাংশ নাগরিকের সমর্থন আছে বলে এক জনমত জরিপে দেখা গেছে; সমর্থকদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যাই বেশি।

১৯৯৫ সালেও পেনশন ব্যবস্থা সংস্কারের এক প্রস্তাবের বিপক্ষে ইউরোপের এ দেশটিতে টানা তিন সপ্তাহের ধর্মঘট হয়েছিল। দেশজুড়ে পরিবহন ব্যবস্থা অকেজো করে দেওয়া ওই ধর্মঘটে জনগণের বিপুল সমর্থন থাকায় তৎকালীন সরকার তাদের সংস্কার প্রস্তাব থেকে পরে সরে আসে।

বৃহস্পতিবারের ধর্মঘট শুরুর আগে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ কাস্তেনার বলেছেন, ধর্মঘট চলাকালে দেশের অন্তত আড়াইশ স্থানে বিক্ষোভ হবে বলে ধারণা করছেন তিনি। এর মধ্যে কিছু প্রতিবাদ সহিংস হতে পারে বলে আশঙ্কা তার।

“অসংখ্য মানুষ এসব প্রতিবাদে অংশ নেবেন এবং আমরা জানি ঝুঁকিগুলো কী। আমি অনুরোধ করেছি, যেসব জায়গায় দাঙ্গা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটবে, সেখানে যেন নিয়ম মেনে (দাঙ্গাকারীদের) গ্রেপ্তার করা হয়,” বলেছেন তিনি।

ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক বিক্ষোভকারীও।

বাস চালক ও ট্রেন কর্মীদের মতো পরিবহন খাতে সক্রিয় সব শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নই বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভে অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে।

আন্তঃনগর ও দ্রুতগতির টিজিভি ট্রেনের মধ্যে কেবল ১০ শতাংশ শুক্রবার চালু ধাকবে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের এসএনসিএফ। মেট্রো চলাচলেও সারাদিন ধরে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করতে পারে বলে যাত্রীদের সতর্ক করেছে প্যারিসের মেট্রো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান আরএটিপি।

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররাও এ ধর্মঘটে অংশ নেবেন। এরই মধ্যে এয়ার ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ৩০ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে। ইজিজেটও তাদের ২০০র বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে।

নার্স, হাসপাতালের কর্মী, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, জ্বালানি খাতের কর্মী ও ডাক বিভাগে কর্মরতরাও এদিনের ধর্মঘটে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

ধর্মঘটের প্রভাবে হাসপাতালের পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে সে চিত্র স্পষ্ট নয় জানিয়ে ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন।

দেশটির প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন জানিয়েছে, ধর্মঘটের কারণে বৃহস্পতিবার প্রতি ১০টি স্কুলের মধ্যে অন্তত ৪টি বন্ধ থাকবে বলে ধারণা তাদের। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষক এ ধর্মঘটে অংশ নেবেন বলে অনুমান তাদের।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ৬০ শতাংশ শিক্ষকও কাজে যোগ দেবেন না বলে ধারণা এ খাতের ইউনিয়নগুলোর; যদিও ধর্মঘট চলাকালে সব স্কুল খোলা থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে তারা।

দেশটির সবচেয়ে কম পেনশনধারী কৃষকরা বৃহস্পতিবারের ধর্মঘটে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন।

ফ্রান্সের এখনকার পেনশন ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের স্কিম আছে, ম্যাক্রোঁ সমগ্র ব্যবস্থাপনাটিকেই সার্বজনীন একটি পদ্ধতিতে আনতে চাইছেন। তবে তার পরিকল্পনায় পূর্ণাঙ্গ পেনশনপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনকার চেয়ে অন্তত কয়েক বছর বেশি কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন পেশাজীবিরা।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সেই এখন পূর্ণাঙ্গ পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে অবসরের বয়সসীমা সবচেয়ে কম, মাত্র ৬২ বছর। যুক্তরাজ্যে এ বয়সসীমা ৬৫।