রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের আগে সু চির পক্ষে সমাবেশ সমর্থকদের

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে বিচারে দেশের হয়ে লড়ার প্রস্তুতি নেওয়া অং সান সু চির পক্ষে মিয়ানমারে তার সমর্থকরা ব্যাপক প্রচারণায় নেমেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2019, 08:21 AM
Updated : 3 Dec 2019, 08:21 AM

চলতি ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে দায়ের করা মামলার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরতার অভিযোগের বিরুদ্ধাচরণ করে আসছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি। তার এ ভূমিকার কারণে মিয়ানমারের শীর্ষ এ রাজনীতিকের মর্যাদা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তলানিতে নেমে গেছে। কিন্তু দেশের ভেতরে তিনি অতুলনীয় জনপ্রিয়তায় ভাসছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রোববারও তার কয়েকশ সমর্থক দেশটির প্রধান শহর ইয়াংগনের কেন্দ্রস্থলে সু চির সমর্থনে সমাবেশ ও প্রচার চালিয়েছে বলে বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে ব্যক্তিগতভাবে লড়বেন, এ ঘোষণা দেওয়ার পর ইয়াংগনে তার সমর্থকরা এ নিয়ে তৃতীয় সমাবেশ করল।

‘লাভ ইচ আদার’ ও ‘স্টপ দ্য হেইট’ গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী মিয়ানমারের র‌্যাগে শিল্পী স পোয়ে কার সমাবেশে বলেছেন, “অং সান সু চি হচ্ছেন এ বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী নেতা।”

তিনি সমাবেশে যখন এমনটা বলছেন, উপস্থিত জনতা তখন পতাকা নাড়িয়ে ও স্লোগান দিয়ে তাতে সমর্থন দিচ্ছিল।

“অবশ্যই আমাদের একতা দেখাতে হবে। যদি একটি দেশের নেতা লেবুকে মিষ্টি বলেন, তাহলে আমাদেরও একে মিষ্টি বলতে হবে,” বলেছেন সমাবেশের অন্যতম আয়োজক অং থু।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’কথিত হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।

গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নালিশ গেছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসির সমর্থনে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া নভেম্বরে জাতিসংঘের আদালত আইসিজিতে মামলা করেছে।

গাম্বিয়া তাদের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাসন ধ্বংসের কথা বলেছে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। তারা বলছে, গণহত্যা বা জাতিগত নিধনযজ্ঞ নয়, তাদের অভিযান নিরাপত্তা বাহিনীর টহল চৌকিতে হামলা চালানো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে।

চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে আইসিজির ওই মামলার প্রথম শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে; ‘মিয়ানমারের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়’ ওই মামলায় লড়তে কয়েকদিনের মধ্যেই সু চি নেদারল্যান্ডসের হেগের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে তার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে।

সমর্থকদের আয়োজিত সমাবেশগুলোতে জনসমাগমের পরিমাণ মোটামুটি হলেও অনলাইনে সু চির সমর্থনে চলা ক্যাম্পেইনে মিলছে ব্যাপক সাড়া।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময়ও ‘অং সান সু চির পাশে দাঁড়ান’ ক্যাম্পেইনটি মিয়ানমারে ভাইরাল হয়েছিল; সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওই প্রচারণা পেয়েছে নতুন গতি। দেশটির অসংখ্য ফেইসবুক ব্যবহারকারী তাদের প্রোফাইল পিকচারে এ স্টেট কাউন্সিলরের ছবি দিয়ে সু চির অবস্থানের প্রতি তাদের সংহতি জানাচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যতম প্রভাবশালী এক ব্যবহারকারী পেনসিলো ১১ লাখ অনুসারীকে তার সঙ্গে হেগ ভ্রমণের দলে যুক্ত হতে আহ্বান জানিয়েছেন; যেতে আগ্রহীদের জন্য টিকেটে ছাড় ঘোষণা করা এক ট্রাভেল এজেন্টের প্রস্তাবও পোস্টে জুড়ে দিয়েছেন তিনি।