স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের পথে বুগেনভিল দ্বীপপুঞ্জ

দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ পাপুয়া নিউগিনির অধীনে থাকা একটি দ্বীপপুঞ্জে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট হতে যাচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2019, 10:29 AM
Updated : 21 Nov 2019, 10:29 AM

দুই দফার ভোটে বাসিন্দাদের রায় পেলে ‘বুগেনভিল’ পৃথিবীর বুকে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

দ্বীপপুঞ্জটির ইতিহাসজুড়ে থাকা ঔপনিবেশিক শাসন, স্বাধীনতার চেষ্টা, নয় বছরের যুদ্ধ আর ধারাবাহিক শান্তি প্রক্রিয়ার পর সেখানে নতুন অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

অধিকতর স্বায়ত্তশাসন না স্বাধীনতা, শনিবারের ভোটে দ্বীপপুঞ্জটির দুই লাখ সাত হাজার বাসিন্দা তারই সিদ্ধান্ত নেবেন।

তিন-চতুর্থাংশ ভোটই স্বাধীনতার পক্ষে পড়বে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। তবে এ দিনের ভোট স্বাধীনতার পক্ষে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে সেটি কার্যকর হবে না। এটি আদতে চিহ্নিত হতে পারে বুগেনভিলের স্বাধীনতার পথে প্রথম ধাপ হিসেবে।

আঠারশো শতকে ফরাসী এক অনুসন্ধানকারী দ্বীপপুঞ্জটির খোঁজ পান; উনিশ শতকের শেষভাগে এটি পরিণত হয় জার্মান উপনিবেশে, নাম পায় জার্মা নিউ গিনি।

প্রথম বিশ্বযু্দ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়ার এর দখল নেয়; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন কিছু সময় জাপানের হাতে থাকলেও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মূলত অস্ট্রেলীয়রাই ছিল ‘বুগেনভিলের’ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।

ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার সময় এ দ্বীপপুঞ্জটি সবসময়ই সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

জার্মানরা তাদের শাসন শুরুর ২১ বছর পর ১৯০৫ সালে প্রথম বুগেনভিলে প্রশাসনিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে।

এটি অত্যন্ত দুর্গম একটি অঞ্চল ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও ম্যধাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকার একাংশ ও উত্তর বুগেনভিলের বাসিন্দাদের সঙ্গে গির্জা ও ঔপনিবেশিক শাসকদের  তেমন যোগাযোগ ছিল না।

১৯৭৫ সালে পাপুয়া নিউ গিনি স্বাধীনতা পেলে বুগেনভিল দেশটির একটি প্রদেশে পরিণত হয়। অবশ্য এর অল্প কিছুকাল পরেই তারা নিজেদের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। ‘রিপাবলিক অব দ্য নর্থ সলোমনের’ ওই স্বাধীনতার ঘোষণা অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনিসহ কারও কাছেই পাত্তা পায়নি।

ঔপনিবেশিক শাসনামলের বর্ণবাদ ও অর্থনৈতিক শোষণই বুগেনভিলের বাসিন্দাদের নিজেদের পরিচয় হাজিরে উদ্বুদ্ধ করে। এ পরিচয়ের প্রধান চিহ্ন, গায়ের রং। বুগেনভিলের বেশিরভাগ বাসিন্দার গায়ের রং পাপুয়া নিউ গিনির অন্যান্য অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের তুলনায় অধিকতর কৃষ্ণবর্ণ।

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হলেও বুগেনভিল দমে যায়নি, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু হয় নয় বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।

যুদ্ধ দ্বীপপুঞ্জটির সর্বনিম্ন চার হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার বাসিন্দার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে ইতিহাসবিদদের অনুমান।

আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় ১৯৯৭ সালে লড়াই শেষে ‘বুগেনভিলের শান্তিচুক্তি’র মাধ্যমে ২০০৫ সালে দ্বীপপুঞ্জটি স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ পায়। ওই চুক্তিতেই স্বাধীনতার প্রশ্নে একটি গণভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। চুক্তিতে গণভোটের ফল মানতে পাপুয়া নিউ গিনিকে বাধ্য করা যাবে না, এমন বিধানও ছিল।

ভোটের আগে পাপুয়া নিউ গিনির সরকারও সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে।

তামা ও সোনার মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দ্বীপপুঞ্জটি আলাদা হয়ে গেলে অন্যান্য প্রদেশও অধিকতর স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা চাইতে পারে এই ভয়েই প্রশান্ত মহাসাগরের দেশটি বুগেনভিলের স্বাধীনতার বিরোধিতা করছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

বুগেনভিলের যুদ্ধ সমাপ্তিতে মধ্যস্থতাকারী অন্যতম দেশ অস্ট্রেলিয়া গণভোটের যে কোনো ফলকেই স্বাগত জানানো হবে বললেও বুগেনভিলের অধিকাংশ বাসিন্দার ধারণা দেশটি তাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করবে।

দ্বীপপুঞ্জটির ভোটের দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনও তাকিয়ে আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও কিরিবাতির পাশাপাশি সম্প্রতি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বুগেনভিলের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগী হয়েছে বেইজিং।

দ্বীপপুঞ্জটির স্বাধীনতার প্রশ্নে এ গণভোট আয়োজনে অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও জাপানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও অর্থায়ন করেছে।

যে কমিশনের অধীনে এ গণভোট হচ্ছে, তার নেতৃত্বে আছেন সাবেক আইরিশ প্রধানমন্ত্রী বার্টি আহের্ন; নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের শান্তি প্রক্রিয়ায় ১৯৯৮ সালে হওয়া গুড ফ্রাইডে চুক্তির মধ্যস্থতায়ও ইনি সহযোগিতা করেছিলেন।

শনিবারের পর ৭ ডিসেম্বর হবে দ্বিতীয় দফার ভোট। ডিসেম্বরের শেষদিকে ফল জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।