২৯ বছর বয়সী সাইমন চেং বুধবার ফেইসবুকে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। বলেছেন, চীনের গোয়েন্দা পুলিশ তাকে বেধড়ক পিটিয়েছে, ঘুমাতে দেয়নি, শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে, হাতকড়া পরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক্স-আকৃতির ক্রসের মতো করে ঝুলিয়ে রেখেছে। চোখ বেঁধে এবং হুড দিয়ে মুখ ঢেকে রেখে চলেছে এসব নির্যাতন এবং একইসঙ্গে জেরাও।
গত অগাস্টে চীনের শেনঝেন শহরে একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে যোগ দিয়ে ফেরার পথে চীনা সীমান্ত পুলিশ কাউলুনের একটি ট্রেন স্টেশনে চেং- কে আটকিয়ে ফের শেনঝেনয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ১৫ দিন আটকে রেখে তার ওপর চলে নির্যাতন।
চেং জানান, পুলিশ তাকে বারবার হংকংয়ের বিক্ষোভে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা এবং তাতে তার (চেং) নিজের এবং বন্ধু-বান্ধবদের অংশগ্রহণের বিষয়ে জেরা করেছিল।
চীনের পুলিশ চেং কে ব্রিটিশ গুপ্তচর বলেও অভিযোগ করে এবং হংকংয়ের বিক্ষোভকারী নেতা ও তাদের সঙ্গে লন্ডনের ‘স্কুল অব ইকোনোমিক্স’ এর সম্পৃক্ততা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়। চীনা মূল ভূখন্ডের হয়ে কাজ করার প্রস্তাবও চেং কে দিয়েছিল চীন।
তাছাড়া, চীনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য চেং কে দিয়ে ক্ষমামূলক বিবৃতি লেখানো, দুস্কর্মের স্বীকারোক্তি আদায় করা, এমনকী চীনের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলে তা রেকর্ডও করা হয়।
যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, চেংয়ের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য এবং তারা তার কথা বিশ্বাস করেছেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক র্যাব এরই মধ্যে চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চীন কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে এবং দায়ীদের জবাবদিহি করবে- যুক্তরাজ্য সেটিই আশা করে বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ওদিকে, চীন এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, তারাও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠাবে এবং যুক্তরাজ্য চীন ও হংকংয়ের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করুক- এটাই তারা আশা করে।
ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে কথা বলে আসার জন্য চীন সেখানকার বিক্ষোভে যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপের অভিযোগ কর করছে।
কে এই সাইমন চেং?
সাইমন চেং হংকংয়ের নাগরিক। তিনি হংকংয়ে অবস্থিত ব্রিটিশ কনস্যুলেটে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কর্মকর্তা হিসাবে দুই বছর চাকরি করেছেন। তিনি বিশেষত স্কটল্যান্ডে চীনা বিনিয়োগ উৎসাহিত করতেন। কাজের সুবাদে তাকে ঘন ঘনই চীনা মূল ভূখন্ডে যেতে হত।
কিন্তু জুনে হংকংয়ে ব্যাপক গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ শুরু হলে চেং একটি বাড়তি দায়িত্ব নিয়েও কাজ করেছেন। আর তা হল রাস্তায় বিক্ষোভের ওপর নজর রাখা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে বসদেরকে জানানো।
হংকংয়ের ব্রিটিশ কনস্যুলেট সে সময় কর্মীদেরকে বিক্ষোভের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন চেং। গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের একজন সমর্থক ছিলেন চেং। ফলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে একাজটি খুব সহজেই করতে পেরেছেন তিনি। তার কাজ ছিল অনেকটা পর্যবেক্ষণ কাজের মতো। অনেক দূতাবাসই যেটি করে থাকে।
কিন্তু হংকংয়ের বিক্ষোভে যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওই সময়ই করতে শুরু করেছিল চীন। এরপরই গত ৮ অগাস্ট হংকংয়ের ব্রিটিশ কনস্যুলেট চেং কে চীনের শেনঝেনে ব্যবসায়িক সম্মেলনে পাঠালে সেখানে তিনি আটক হন।