জংলি আইনে সায় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: ফিলিস্তিন

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চার দশকের অবস্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 03:11 PM
Updated : 19 Nov 2019, 04:26 PM

ফিলিস্তিনের প্রধান শান্তি আলোচক সায়েব ইরাকাত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের জায়গায় ‘জংলি আইন’ (জোর যার মুলুক তার) প্রতিষ্ঠা পাওয়ারই হুমকি সৃষ্টি করেছে।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, দখলকৃত পশ্চিম তীরে তেল আবিবের বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’।

“সব পক্ষের আইনি যুক্তি সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, পশ্চিম তীরে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ইসরায়েল যে বসতি স্থাপন করছে, আদতে তা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

এর মধ্য দিয়ে তিনি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান পরিষ্কার করে দেন।

ফিলিস্তিনি আলোচক সায়েব ইরাকাত বলেছেন, “ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের যেসব ভূখণ্ড দখল করে উপনিবেশের মত বসতি স্থাপন করছে তা আন্তর্জাতিক আইনে কেবল অবৈধই নয়, যুদ্ধাপরাধও।”

“আর ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক আইন অবজ্ঞা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই….তা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি।”

ফিলিস্তিন নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা ‘ঐতিহাসিক একটি ভুল শুধরে দিল’।

ওদিকে, জাতিসংঘ বলছে, আন্তর্জাতিক আইনে ওই বসতি স্থাপন অবৈধ।

১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় ইসরায়েল যেসব ভূখণ্ড দখল করেছিল সেখানে ধীরে ধীরে তারা ইহুদি বসতি স্থাপন করে পাকাপাকিভাবে নিজেদের অংশ করে নিতে চাইছে। ওই বসতি নিয়ে কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে বিরোধ চলছে।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অধিকৃত ভূমিতে প্রায় ছয় লাখ ইহুদি বাস করে। ফিলিস্তিনি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।

তাদের যুক্তি, তারা ভবিষ্যৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ওই ভূমি দাবি করবেন। এখন বসতি স্থাপন করলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন প্রায় অবসম্ভব হয়ে পড়বে।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করা বা বাতিল করার যোগ্য না, তাদের সে ক্ষমতা কেউ দেয়নি। একইসঙ্গে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকে বৈধতা দেওয়ার অধিকারও তাদের নেই।”

ফিলিস্তিনি গেরিলা দলগুলোও ইসরায়েলের বসতিকে বৈধতা দেওয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে অসলো শান্তি প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক শেষকৃত্য হল। যে শান্তি প্রক্রিয়া পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজায় ফিলিস্তিনের স্বশাসনের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

ইসরায়েলের দখলদারিত্বে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাকও দিয়েছে ফিলিস্তিনের গেরিলা দলগুলো।

ওদিকে, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনার ভবিষ্যতের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। ইসরায়েলের বসতিও আন্তর্জাতিক আইনের ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ বলে সাফাদি মন্তব্য করেন।