ধোঁয়ায় ঢাকা পড়েছে সিডনি, বায়ুদূষণের মাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ

অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম নগরী সিডনির বাসিন্দারা মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে উঠে সূর্যের মুখ দেখতে পায়নি। কারণ, গাঢ় ধোঁয়ার চাদরে ছেয়ে গেছে সিডনির আকাশ। ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে বায়ুদূষণের মাত্রা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 01:28 PM
Updated : 19 Nov 2019, 01:28 PM

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ভয়াবহ দাবানলের ধোঁয়া বাতাসে ভেসে এসে একরাতের মধ্যে সিডনির আকাশ ছেয়ে ফেলেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাসিন্দারা ধোঁয়ায় ঘোলাটে হয়ে যাওয়া আকাশের ছবি দিচ্ছেন। কেউ কেউ ঘরের ভেতরও ধোঁয়ায় ছেয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী সিডনিতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বাস করে। বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার নগরীর পশ্চিমাংশে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। যা আরো বাড়তে পারে। এই তাপমাত্রা দাবানল আরো উস্কে দিচ্ছে।

নিউ সাউথ ওয়েলসে গত অক্টোবর থেকে অর্ধশতাধিক দাবানল জ্বলছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের।

নতুন নতুন জায়গায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় মঙ্গলবার সিডনিতে উচ্চতর দাবানল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এদিন নগরীর কোথাও কোথাও বায়ু দূষণ দেশের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে আট গুণ বেশি রেকর্ড করা হয়েছে।

সিডনির উত্তর-পশ্চিমে সকালের দিকে কয়েকটি শহরতলীতে বাতাসের গুণমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির জাতীয় একিউআই মানদণ্ড অনুযায়ী, ৬৬ এর নিচে বাতাসের মান ভাল। আর ১শ’ হলে তা সন্তোষজনক।

বাতাসে দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে থাকার কারণে এরই মধ্যে অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টে ভোগা ৫০ জনেরও বেশি মানুষের চিকিৎসা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা লোকজনকে বাড়ির ভেতরে অবস্থান করার পরমার্শ দিয়েছেন। এছাড়া এই সময়ে শারীরিক পরিশ্রমও কম করতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টে ভোগা এবং ফুসফুসের জটিলতা আছে এমন ব্যক্তিদের এ পরিস্থিতে কিভাবে চলাফেরা ও জীবন-যাপন করতে হবে সে বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে।

আগামী কয়েকদিন এই ধোঁয়া সিডনির আকাশে থাকবে বলে সতর্ক করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস রুরাল ফায়ার সার্ভিস।

সিডনির বাসিন্দা ফ্রাঙ্কস মাও বিবিসি’কে বলেন, “আপনি ঘুম থেকেই উঠেই ধোঁয়ার গন্ধ পাবেন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমার পাশের ঘরে থাকা ব্যক্তি আবার ঘরের ভেতর সিগারেট খেয়েছে। পরে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটি তা নয়। আকাশ পোড়া ধূসর রঙের হয়ে গেছে।

“আতঙ্কে এদিন আমি ফোন খুলেই ইন্সটাগ্রাম বা ইমেইল চেক করিনি। বরং গত সপ্তাহে ডাউনলোড করা নতুন একটি অ্যাপ দেখেছি, যেটাতে দাবানল ঠিক কোথায় আছে তা জানা যায়। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, নতুন করে কোথাও ছড়ায়নি। কিন্তু আগামী কয়েকদিনে কী হয় বলা মুশকিল। দাবানল মারাত্মক রূপ নিয়েছে এবং যেকোনো সময় বাতাসের গতি পরিবর্তন হয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যেতে পারে।”

প্রতিদিন হেঁটে কর্মস্থলে গেলেও মঙ্গলবার বাসে চড়ে গিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “বাসের ভেতরও লোকজন কাশছিল, কারো কারো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।”

গত সপ্তাহে দাবানল সিডনি উপকণ্ঠে পৌঁছে গেলে নগরীটি ঝুঁকিতে পড়ে যায়।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সিডনি থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ওলেমি ন্যাশনাল পার্কে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার কারণেই ধোঁয়া নগরীতে পৌঁছে গেছে। সেখানে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জায়গা জুড়ে আগুন জ্বলছে।