যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ

আফগানিস্তান ও ইরাকে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধাপরাধ যুক্তরাজ্য সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী ধামাচাপা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2019, 05:49 PM
Updated : 18 Nov 2019, 03:09 AM

ওই দুই দেশে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা সরকার ও সেনাবাহিনী গোপন করেছে।

বিবিসি প্যানোরামা প্রোগ্রাম ও ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকার এক অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানী দলের কাছে খোদ ১১ ব্রিটিশ গোয়েন্দা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ তারা পেয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গোয়েন্দারা মনে করেন, ওইসব হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সেনাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দৃঢ়ভাবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিবিসি জানায়, ইরাক হিস্টোরিক অ্যালেগেশনস টিম (আইএইচএটি) এবং অপারেশন নর্থমুর এর ভেতর থেকে ওই প্রমাণগুলো পাওয়া গেছে।

আইএইচএটি ইরাকে সামরিক অভিযান এবং অবরোধের সময় ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করেছে। আর নর্থমুর আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করেছে।

তবে সম্প্রতি ফিল শাইনার নামে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর যু্ক্তরাজ্য সরকার উভয় কমিটির তদন্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

শাইনার আইএইচএটির কাছে ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে এক হাজারের বেশি ঘটনার কথা তুলে ধরেছিলেন। পরে জানা যায়, তিনি ইরাক থেকে মক্কেল খুঁজে দিতে অর্থের বিনিময়ে দালাল নিযুক্ত করেছেন।

তবে আইএইচএটি ও অপারেশন নর্থমুরের সাবেক গোয়েন্দারা মনে করেন, ব্রিটিশ সরকার আসলে ফিল শাইনারের ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত করে সেনাদের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্ত বন্ধ করার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এই দুই তদন্তে বেরিয়ে আসা কোনো ঘটনারই বিচার শুরু হয়নি।

আইএইচএটির এক গোয়েন্দা বিবিসি প্যানোরামা কে বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো সেনা সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করার ইচ্ছাই নেই, তা তিনি যে র‌্যাঙ্কেরই হন না কেন।”

আরেক গোয়েন্দা বলেন, যুদ্ধাপরাধের শিকার পরিবারগুলোকে খুব বাজেভাবে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

“আমি আসলে এখানে ন্যক্কারজনক শব্দটি ব্যবহার করতে চাই। আমার ওইসব পরিবারের জন্য মায়া হয়…..তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। একজন ব্রিটিশ হিসেবে কিভাবে আপনি আপনার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারলেন?”

বিবিসি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া কয়েকটি ঘটনা নিজেরাও যাচাই করেছে। যার একটি ২০০৩ সালে বসরায় ঘটা ঘটনা। সেখানে এক ব্রিটিশ সেনা টহল দেওয়ার সময় একটি ইরাকি পুলিশকে গুলি করে।

রাইদ আল-মোসাউই নিজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় পাশের সরু গলিতে গুলিবিদ্ধ হন এবং ওই ক্ষত থেকেই তার মৃত্যু হয়।

সেখানে ব্রিটিশ সেনাদের কমান্ডিং অফিসার মেজর ক্রিস্টোফার ঘটনাটির তদন্ত করেন এবং মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, অভিযুক্ত ব্রিটিশ সেনা আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়ে ছিলেন। তাই সেটা অপরাধ নয়। কারণ, ইরাকি পুলিশ আগে তাকে গুলি করে। অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী ব্রিটিশ সেনার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন বলেও্ প্রতিবেদনে বলেছিলেন।

অথচ আইএইচএটি প্রায় দুই বছর ধরে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করে। গোয়েন্দারা প্রায় ৮০ জন ব্রিটিশ সেনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, যাদের মধ্যে কথিত প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন।

ওই প্রত্যক্ষদর্শী অবশ্য গোয়েন্দাদের বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি ওই সরুগলিতে ছিলেনই না। বরং তিনি মেজর ক্রিস্টোফারের প্রতিবেদন সঠিক নয় বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “আমি শুধু একটি গুলিরই আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। তার অর্থ দাঁড়ায়, নিহত ওই ইরাকি পুলিশ গুলি ছোড়েননি।”

তাই আইএইচএটির প্রতিবেদনে, রাইদকে গুলি করা ব্রিটিশ সেনার এবং মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে ঘটনা আড়াল করা কামান্ডিং অফিসারের বিচার হওয়া উচিত বলা হয়।

অথচ যুক্তরাজ্যের সেনবাহিনী তাদের কারো বিরুদ্ধেই কোনো ধারনের ব্যবস্থা নেয়নি। এরকম আরো কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা আইএইচএটির প্রতিবেদনে উঠে আসে।