ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী বুধবার গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে ৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরা।
এ নিয়ে মঙ্গল ও বুধ দুইদিনে অন্তত ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেল।
গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বুধবার সকালেও ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে সাইরেনের সতর্ক সঙ্কেত বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলিরা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে জড়ো হয়। তবে রকেট হামলায় হতাহতের কোনো খবর হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের শীর্ষ কমান্ডার বাহা আবু আল-আত্তা মঙ্গলবার ভোররাতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো ও শিন বেত সিকিউরিটি সার্ভিসের যৌথ আভিযানে নিহত হন। ইসরায়েলি হামলায় আত্তার স্ত্রীও নিহত হন।
ইসলামিক জিহাদের এক কর্মকর্তার দামেস্কের বাড়িতে পৃথক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই কর্মকর্তারা ছেলেসহ দুই জন নিহত হন। সিরিয়া তাদের রাজধানীতে এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে, কিন্তু ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে।
এরপরই ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র লড়াই শুরু হয়। মঙ্গলবার সারাদিন ধরে ইসরায়েলে প্রায় ২০০ রকেট নিক্ষেপ করে ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা। ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ২০টির মতো রকেট প্রতিরোধ করে। বুধবার সকালেও চলে রকেট হামলা।
গাজা থেকে ছুটে আসা রকেটে প্রায় ২৫ জন ইসরায়েলি জখম হন। কিছু রকেট ইসরায়েলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত তেল আবিব শহরে গিয়েও পড়ে। জবাবে ইসরায়েলও গাজায় ইসলামিক জিহাদের অবস্থানগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে নয় ফিলিস্তিনি নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, বুধবার ভোরে গাজা সিটি থেকে ট্যাক্সি ও অ্যাম্বুলেন্সে করে ছয় ফিলিস্তিনির মৃতদেহ শিফা হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। চিকিৎসাকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত সবাই বেসামরিক নাগরিক।
বুধবার সকালেই গাজা সিটির দক্ষিণাঞ্চলে পৃথক আরেকটি হামলায় ইসলামিক জিহাদ তাদের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানায়। চিকিৎসাকর্মীরা পরে মোটরসাইকেল আরোহী আরেক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে শঙ্কায় রকেট হামলার আওতায় থাকা এলাকাগুলোর স্কুল বন্ধ রেখেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় নয় এমন সব ধরনের কাজও বাতিল করেছে তারা।
সারাদিন ধরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরায়েল গাজার শাসক দল হামাসের কোনো লক্ষ্যে হামলা করেনি। চলতি লড়াই থেকে হামাসকে দূরে রাখতেই ইসরায়েল এ কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাসের কোনো অবস্থানে হামলা হলে আর তাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে গোষ্ঠীটি এ লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বে, কিন্তু চলতি লড়াইয়ে হামাসকে জড়ানোর কোনো আগ্রহ তাদের নেই।
এ সংঘাতে হামাস জড়িয়ে পড়লে লড়াইয়ের চরিত্র উল্লেখযোগ্যভাবে পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ তাদের সামরিক সামর্থ্য ইসলামিক জিহাদের চেয়ে অনেক বেশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হামাসও নিজেদের এ সংঘাত থেকে দূরে রেখেছে।
নতুন করে শুরু হওয়া এ সংঘাত থামানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ। এ লক্ষে বিশ্ব সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত মিশরের রাজধানী কায়রোর পথে রওনা হয়েছেন বলে কূটনৈতিক একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।