দাবানল থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে লাখো অস্ট্রেলীয়

ঘর ছেড়ে নিরাপদ কোনো এলাকায় সরে যাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে, কর্তৃপক্ষের এমন সতর্কবার্তার পর অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানল থেকে বাঁচতে কয়েক লাখ বাসিন্দা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2019, 09:32 AM
Updated : 12 Nov 2019, 09:32 AM

মঙ্গলবার নিউ সাউথ ওয়েলসের কর্মকর্তারা দাবানল নিয়ে ১১টি জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সতর্কতাগুলোর প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা এলাকার জন্য দেওয়া হয়। ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মধ্যেই রাজ্যজুড়ে ৭১টি দাবানলের অর্ধেকেরও বেশি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বলেও কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

“আবহাওয়া পরিস্থিতির ক্রমাবনতি বিশেষ করে প্রবল হাওয়ায় দাবানলগুলো আরও শক্তি পাওয়ার কারণে বিকাল পর্যন্ত অবস্থার অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে,” মঙ্গলবার সিডনিতে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন নিউ সাউথ ওয়েলসের রুরাল ফায়ার সার্ভিস কমিশনার শেন ফিটজসিমনস। পরিস্থিতি নিয়ে দুই ঘণ্টা পরপরই আপডেট দিচ্ছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মের শুষ্ক মৌসুমে প্রায়ই প্রাণঘাতী দাবানল দেখা যায়; তবে এবছর এর মাত্রা ও তুলনামূলক আগেভাগেই শুরু হওয়া অনেককেই বিস্মিত করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার এবারের দাবানলের ভয়াবহতার পেছনে বিশ্লেষকরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই কারণ হিসেবে দেখছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে। কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসের একাংশে টানা তিন বছরের খরায় যে ভয়াবহ শুষ্ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, এবারের দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় তাও ভূমিকা রেখেছে।

প্রবল বাতাস ও উচ্চ তাপমাত্রার ‘অভূতপূর্ব’ সংমিশ্রনে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়া দাবানল এরই মধ্যে তিনজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; ধ্বংস করেছে দেড় শতাধিক বাড়িঘর।

জনসাধারণের মৃত্যু ঠেকাতে নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ড কর্তৃপক্ষ সাত দিনের জরুরি অবস্থা জারি করে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের হাতে সরকারি সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, বাসিন্দাদের সরে যেতে বাধ্য করা, রাস্তাঘাট ও সরকারি সেবা বন্ধ করে দেওয়াসহ বিপুল পরিমাণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

পূর্ব উপকূলের বিস্তৃর্ণ এলাকায় দাবানলের কারণে প্রায় ৫০ লাখ বাসিন্দার সিডনি ‘বিপজ্জনক ধোঁয়াশায়’ আচ্ছাদিত হওয়ার পর শহরটির কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জনসাধারণকে ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরই মধ্যে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রায় ৬০০টি স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কুইন্সল্যান্ডের পরিস্থিতি এতটা খারাপ না হলেও সেখানেও দাবানলের কারণে সৃষ্ট হুমকির মাত্রা ‘মারাত্মক’ বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। উত্তরের এ রাজ্যেও প্রায় ২২টি আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণশীল সরকারের অবস্থানের কারণেই দাবানল এবার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের।

দেশটির আবহাওয়া ব্যুরোও এবার দাবানল মৌসুমের স্থায়িত্ব বেশি হবে বলে জানিয়েছে।

এবারের দাবানল জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলে সৃষ্টি হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

উপপ্রধানমন্ত্রী মাইকেল ম্যাককরমাক উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন।