সীমান্ত থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের সরাতে তুরস্ক-রাশিয়ার চুক্তি

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলা ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র সরাতে চুক্তিতে পৌঁছেছে তুরস্ক ও রাশিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2019, 08:37 AM
Updated : 23 Oct 2019, 08:39 AM

মঙ্গলবার সোচিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী অবকাশ যাপন কেন্দ্রে তার সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ানের ছয় ঘণ্টা বৈঠকের পর দুই দেশ এ চুক্তিতে পৌঁছায় বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

মস্কো ও আঙ্কারা উভয়েই চুক্তিটিকে ‘অনন্য সাফল্য’ বলে বর্ণনা করেছে।

চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছে, আঙ্কারার দাবি অনুযায়ী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ‘নিরাপদ এলাকা’ থেকে কুর্দি সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের জানিয়েছে। এ কুর্দি সেনা প্রত্যাহারের শর্তেই তুরস্ক তাদের ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’য়ে পাঁচ দিনের বিরতি দিয়েছিল।

এর ফলে অভিযান এলাকার বাইরে এই মুহুর্তে আর নতুন অভিযান শুরুর প্রয়োজনীয়তা নেই, বিবৃতিতে বলেছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিশ্বব্যাপী তুমুল সমালোচনার মধ্যে গত ৯ অক্টোবর থেকে আঙ্কারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে যে অভিযান শুরু করেছিল, এ বিবৃতির মধ্য দিয়েই কার্যত তার পরিসমাপ্তি ঘটল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওই এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পরপরই তুরস্ক কুর্দিবিরোধী এ অভিযান শুরু করে। কয়েকদিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে বৈঠকের পর এরদোয়ান সিরিয়ার রাস আল-আইন ও তেল আবিয়াদ এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে কুর্দি সৈন্য প্রত্যাহারের শর্ত দিয়ে পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হন। মঙ্গলবার ওই যুদ্ধবিরতি শেষ হয়।

এদিনই এরদোয়ান ও পুতিন সিরীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলা ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র সরাতে নতুন এক চুক্তিতে উপনীত হন।

এ চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্কের সীমান্ত থেকে সিরিয়ার ভেতরের ৩০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কুর্দি গেরিলাদের সরাতে বুধবার থেকে রাশিয়ান সামরিক পুলিশ ও সিরিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনী কাজ শুরু করবে। ছয়দিন পর থেকে রাশিয়া ও তুরস্কের সেনাবাহিনী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় আঙ্কারার কাঙ্ক্ষিত ‘নিরাপদ এলাকায়’ যৌথ টহল শুরু করবে।

তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, “সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা প্রশমনে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।”

তুরস্কের কর্মকর্তারাও এ চুক্তিটিকে ‘অসাধারণ’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। এতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকা থেকে কুর্দিদের সরিয়ে দিতে আঙ্কারার দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।

মঙ্গলবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সের কণ্ঠেও সিরিয়ায় তুরস্কের ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠায় সমর্থনের সুর শোনা গেছে।

তুরস্কে নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক আছে সন্দেহে সিরিয়ার ওয়াইপিজি গেরিলাদেরও ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে আঙ্কারা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের শুরু করা অভিযানে ওই অঞ্চলের প্রায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুহারা এবং শতাধিক বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

এ অভিযানে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর ২৫৯ যোদ্ধার পাশাপাশি তুরস্ক সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহী বাহিনীর ১৯৬ জন যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে তুরস্ক বলছে, তাদের অভিযানে ৭৬৫ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হলেও কোনো বেসামরিক প্রাণ হারায়নি।