ডার্ক ওয়েবে শিশুপর্নের বাজার: দেশে দেশে গ্রেপ্তার তিন শতাধিক

ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের লেনদেনের সূত্র ধরে ‘ডার্ক ওয়েবে শিশু পর্নের অন্যতম বড় বাজারের’ সন্ধান পেয়ে তা উচ্ছেদের পর বিভিন্ন দেশে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2019, 07:31 AM
Updated : 17 Oct 2019, 10:14 AM

ওয়েলকাম টু ভিডিও নামে ওই পর্নসাইটে শিশু নিপীড়নের দুই লাখের বেশি ভিডিও রয়েছে, যেগুলো সব মিলিয়ে একলাখের বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে।

এই পর্নসাইট চালানোর দায়ে নয় ধরণের অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক জং উ সনের (২৩) বিরুদ্ধে বুধবার বিচার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। সন কোরিয়াতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২৫ বছরের দণ্ডভোগ করছেন।

এসব পর্ন ভিডিওর সন্দেহভাজন ব্যবহারকারী হিসেবে এছাড়াও মোট ১৩টি দেশে ৩৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে।

এরা দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, স্পেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চেক রিপাবলিক এবং কানাডাসহ মোট ১৩টি দেশের অধিবাসী।

এক শিশু যৌন নিপীড়নকারীর বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে গত বছর ডার্ক ওয়েবে এই সাইটের সন্ধান পেয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জার্মানির সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্স তিন বছর কাজ করার পর ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন লেনদেনের সূত্র ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ডার্কনেটের সার্ভার শনাক্ত করে।

 

পরে সেখানকার পুলিশের সহায়তায় এই সার্ভার জব্দ করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় আট টেরাবাইটের সার্ভারের কনটেন্ট বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এতে আড়াই লাখের বেশি ভিডিও আছে, যার ৪৫ শতাংশেই নতুন অর্থাৎ ওয়েবে সেগুলোর অস্তিত্ব কখনো ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই সাইটে একবছর থেকে শুরু করে নানা বয়সী শিশুদের নিয়ে তৈরি যৌন নিপীড়নের ভিডিও আপলোড করা ছিল। সেখানে শিশুদের ছাড়া অন্য কোনো পর্ন ভিডিও আপলোড না করতেও নিষেধ করা হয়।

কীভাবে এসব ভিডিও ব্যবহারে বিটকয়েন ব্যবহার করা হতো তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ।

শুধুমাত্র শিশুদের ব্যবহার করে টাকা কামানোর জন্য এভাবে ডার্কনেটের ব্যবহার এই প্রথম। ক্রিপ্টোকারিন্সির বিনিময়ে ভিডিওগুলি বিক্রির প্রস্তা দিতে এই ‘ওয়েলকাম টু ভিডিও’। এই সাইটে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় প্রত্যেক ব্যবহারকারীকে একটি করে স্বতন্ত্র বিটকয়েন অ্যাড্রেস দেওয়া হতো।

সার্ভার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওয়েবসাইটটিতে ১০ লাখেরও বেশি বিটকয়েন অ্যাড্রেস আছে। অর্থাৎ ওয়েবসাইটটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ বলে অনুমান করা যায়।

যৌথ যৌথ টাস্কফোর্সের এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ২৩ শিশুকে নির্যাতনমূলক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভিডিওগুলিতে দৃশ্যমান অন্য শিশুদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৌসুঁলি জেসি কে লিউ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্যোগে এ অভিযানের মামলাটি চালানোর জন্য মার্কিন বিশ্বজুড়ে শিশুরা নিরাপদ ও ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য তহবিল যোগার হয়েছে।

“এধরণের অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে তাদের ভয়াবহ অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে দেশে-বিদেশে এবং ডার্কনেটের ভেতরে-বাইরে অভিযান চলবে।”

গত বছর ইংল্যান্ডে শিশুর নিপীড়ক ম্যাথু ফ্যাল্ডারকে আটকের পর তদন্ত করতে গিয়ে বিষয়টি উন্মোচিত হয়। ডার্ক ওয়েবে শিশু নিপীড়ন বিষয়ে পরামর্শ ও ছবি ছড়ানোর দায়ে তার ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

এই ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে যুক্তরাজ্যে এর মধ্যে সাতজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন ২৬ বছর বয়ষী কাইল ফক্সও, যিনি পাঁচ বছরের এক বালককে ধর্ষণের জন্য গত মার্চ থেকে ২২ বছরের দণ্ড ভোগ করছেন। ডার্কসাইটটির একটি ভিডিওতে তাকে তিন বছরের মেয়েকে যৌন নির্যাতন চালাতে দেখা যায়।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা নিকি হল্যান্ড বলেন, “ডার্ক ওয়েবে শিশু যৌন অপরাধীরা আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।

“নিজেদের যত গোপন তারা ভাবেন ততটা নয়, তারা যেমন ভাবেন ততটা নিরাপদও তারা নন।”