সেপ্টেম্বরে ইরানে ‘গোপন সাইবার হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র’

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগারসহ সৌদি আরবের দুটি প্ল্যান্ট আক্রান্ত হওয়ার পর এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে গোপন সাইবার হামলা চালিয়েছিল বলে মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2019, 10:49 AM
Updated : 16 Oct 2019, 10:49 AM

তেহরানের ‘অপপ্রচার’ ছড়ানোর সক্ষমতা লক্ষ্য করেই সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ওই অভিযান হয়েছিল বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

হামলায় ইরানের বেশকিছু যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এক কর্মকর্তা দাবি করলেও এ প্রসঙ্গে আর বিস্তারিত বলতে রাজি হননি তিনি।

গত মাসের ১৪ তারিখে সৌদি আরবের তেলশিল্পের প্রাণকেন্দ্রে ওই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বৈশ্বিক তেল সরবরাহের পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছিল।

ইয়েমেনের ইরানঘনিষ্ঠ হুতি বিদ্রোহীরা শুরু থেকেই হামলাটির দায় স্বীকার করে এলেও পশ্চিমা দেশগুলো তাতে কান দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করলেও তেহরান এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে।     

মার্কিন প্রশাসন গত বছর ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়ে ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার পর থেকে উপসাগরে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। ওয়াশিংটন তেহরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে একের পর এক পদক্ষেপও নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

জুনে ইরান তাদের জলসীমায় ‘অবৈধ অনু্প্রবেশ’ করা মার্কিন একটি ড্রোন ভূপাতিত করলে দুই দেশের উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে।

উপসাগরে বেশ কয়েকটি তেলের ট্যাংকারে হামলার ঘটনায়ও ওয়াশিংটনের তেহরানকে দোষারোপ করলেও শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ড্রোন ভূপাতিত ও মে মাসে উপসাগরে তেলের ট্যাংকারে হামলার ঘটনার পরও ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার হামলার খবর পাওয়া যায়। সেসব হামলার ব্যাপকতার তুলনায় সেপ্টেম্বরের শেষদিকে চালানো হামলাটি ‘তুলনামূলক সীমিত আকারে’ হয়েছে বলে ধারণা করছে রয়টার্স।

সরাসরি সংঘাতের পথে না গিয়ে ইরানকে দমাতে মার্কিন প্রশাসনের কাছে এ সাইবার হামলাই বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে বলেও মত অনেক পর্যবেক্ষকের।

“মানুষ হত্যা না করে কিংবা কোথাও বিস্ফোরণ না ঘটিয়েও আপনি (শত্রুর) ক্ষতি করতে পারেন; এটি আমাদের সম্ভারে নতুন বিকল্প হিসেবে যুক্ত হয়েছে, যা আগে ছিল না। এখন এর ব্যবহারে আমাদের ইচ্ছা কতখানি তাই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাইবার বিশেষজ্ঞ জেমস লুইস।

সৌদি তেল শিল্পক্ষেত্রে হামলার প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি প্রদর্শনের সুযোগও হাতছাড়া করছে না ওয়াশিংটন। ইরানের হুমকি মোকাবেলায় এরই মধ্যে সৌদি আরবে নতুন তিন হাজার সৈন্য মোতায়েনেরও ঘোষণা দিয়েছে তারা।

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তেহরানে সাইবার হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

“নীতি ও নিরাপত্তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা আমাদের সাইবারস্পেস সংক্রান্ত কার্যক্রম, তথ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলি না,” বলেছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র এলিসা স্মিথ।