হংকংয়ে মুখোশ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন করে গণবিক্ষোভ

চার মাসের টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে ঔপনিবেশিক যুগের জরুরি আইনের আওতায় হংকংয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশে মুখোশ পরা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে নতুন করে রাস্তায় নেমে এসেছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 6 Oct 2019, 11:33 AM
Updated : 6 Oct 2019, 12:07 PM

রোববার নতুন আইন অমান্য করে মুখোশ পরেই তারা হংকংয়ের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভ করেছে। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তারা কয়েকটি স্থান থেকে সমন্বিতভাবে পদযাত্রা শুরু করে।

পুলিশ কয়েক জাগায় টিয়ার গ্যাস ছুড়লেও তা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ হয়েছে। বৃষ্টিও উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে গেছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হঠাতে জলকামানও ব্যবহার করেছে।

বিক্ষোভকারীদের মুখ থেকে মুখোশ হটিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন মানুষ আহত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি সরকারি অফিস মেট্রো স্টেশন এবং চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করেছে।

হংকংয়ের নেতা ক্যারি লাম শুক্রবার মুখোশ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরই এর প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় একটি ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়েছিল। শনিবার সে বিক্ষোভে সামিল হয় আরো বেশি মানুষ। রোববার তা আরো বড় আকার ধারণ করেছে।

রোববারের বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেওয়া নীল মুখোশধারী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, “মুখোশ বিরোধী ওই আইন কেবলমাত্র আমাদের ক্ষোভই বাড়িয়েছে। আরো অনেক মানুষ এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে। আমরা নতুন আইনকে ভয় পাই না। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের অধিকারের জন্য লড়ব। আমি মুখোশ পরেছি সরকারকে এ বার্তাই দিতে যে তাদের দমনপীড়নেকে আমি ভয় করি না।”

হংকং পুলিশের ভাষ্য, বিক্ষোভকারীরা বেআইনিভাবে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে, প্রধান প্রধান সড়ক বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে বিক্ষোভকারীরা দ্রুতই ঘরে না ফিরলে তাদের ছত্রভঙ্গ করার অভিযান শিগগিরই চালানো হবে।

হংকংয়ের নেতা লামও শনিবার আর কোনো সহিংসতা না হতে দেওয়ার অঙ্গীকার করে বলেছেন, আমরা আর দাঙ্গা-বিক্ষোভকারীদেরকে আমাদের প্রিয় হংকংকে ধ্বংস করতে দিতে পারি না।

হংকংয়ের জননিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া বিক্ষোভকারীদের ‘চরম সহিংসতা’র প্রেক্ষাপটেই মুখোশ বিরোধী আইন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। নতুন আইনের আওতায় মুখ ঢেকে রাখার জন্য বিক্ষোভকারীদের একবছরের জেল হতে পারে।

হংকংয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে এবং তাদের যেন শনাক্ত করা না যায়, এজন্য প্রায়ই মুখোশ পরে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন,  নতুন আইনটি খুবই বিতর্কিত এবং এটি কার্যকর করাও কঠিন হবে। তাছাড়া, হংকংয়ে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে এটিই সম্ভবত প্রথম এমন কড়া পদক্ষেপ বলে সতর্ক করেছেন সমালোচকরাও।

চীনের মূলভূখণ্ডে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে একটি প্রস্তাবিত বিল বাতিলের দাবিতে গত জুন মাসে হংকংয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল।

টানা আন্দোলনের মুখে ওই বিল প্রথমে ‘মৃত’ এবং পরে বাতিল ঘোষণা করা হলেও আন্দোলন থামেনি। বরং গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা এখন হংকংয়ের চীনপন্থি সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে।

প্রায় চার মাস ধরে চলা আন্দোলনের সবচেয়ে সংঘাতময় দিনটি ছিল চীনে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর দিন।

পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় ১৮ বছরের এক তরুণ একটি ধাতব লাঠি হাতে এক পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে তাকে থামাকে পুলিশ সরাসরি তার বুকে গুলি করে।

হংকং জুড়ে এদিন ২৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের ১৭৮ জন পুরুষ ও ৯১ জন নারী। বিক্ষোভ শুরুর পর এর আগে একদিনে এত বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়নি।