তিয়ানআনমেন স্কয়ারে মঙ্গলবারের এ কুচকাওয়াজে দেশটির প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি এবং ৯৭টি দেশের সামরিক অ্যাটাশেরা উপস্থিত থাকবেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সম্প্রতি বলেছেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেইজিং ‘পেশীশক্তি’ দেখাচ্ছে না বা এর প্রয়োজনীয়তাও দেখছে না।
‘শান্তিকামী ও দায়বদ্ধ চীনকে’ উপস্থাপন করাই এ প্রদর্শনীর লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ৫৯টি পৃথক বিভাগের ১৫ হাজার সদস্য এবারের কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন; ৫৮০টি সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হবে, উড়ানো হবে ১৬০টি এয়ারক্রাফট।
নিজেদের বানানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের সক্ষমতার এ প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) খুব উৎফুল্ল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এতে সড়কে সহজে পরিবহনযোগ্য ডিএফ-৪১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অত্যাধুনিক ভার্সনটি প্রথমবারে মতো প্রদর্শন করা হবে। এ মারণাস্ত্রটি বিশ্বের যে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে এবং একইসময়ে ১০টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণে সক্ষম, বলছেন চীনা সমর বিশ্লেষকরা।
প্রদর্শনীতে রাশিয়ার অ্যাভানগার্দ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনার মতো হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা ডিএফ-১৭রও দেখা মিলবে। জাহাজ ও বিমানবিধ্বংসী নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি থাকবে দূরপাল্লার একাধিক রকেট লঞ্চারের উপস্থিতি।
প্রদর্শনীতে থাকছে রসদ সরবরাহ বিমান ওয়াই-২০, স্টিলথ জঙ্গিবিমান জে-২০সহ উড়ন্ত অবস্থায় জ্বালানি ভরা ও বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনে সক্ষম বোমারু বিমান এইচ৬-এনের সর্বশেষ ভার্সন।
চীন বলছে, আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তারা একটি ‘শক্তিশালী সামরিক বাহিনী’ বানাচ্ছে, যা একইসঙ্গে বিশ্বের প্রধান প্রধান সামরিক বাহিনীগুলোর সক্ষমতার সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমিয়ে আনবে।
গত এক দশকে দেশটি প্রতি বছরই তাদের সামরিক বাজেট ১০ শতাংশ করে বাড়িয়েছে; এ বছর তাদের সামরিক বাজেট দাঁড়িয়েছে ১৬৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
২০১৮ সালে দেশটি কেবল সমরাস্ত্রের পরীক্ষানিরীক্ষা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নেই ৫৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। দেশটির সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্রে এ ব্যয়কে ‘যুক্তিসঙ্গত ও উপযুক্ত’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবেলায় শি জিনপিংয়ের মেয়াদকালের শুরু থেকেই সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে শুরু করে বেইজিং। দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক স্থাপনা নির্মাণ ও টহলের পরিমাণ বাড়িয়ে এরইমধ্যে তারা তাদের সামরিক অগ্রগতির প্রমাণও দিয়েছে।
তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় এখনও বেশ নগণ্য বলে মন্তব্য করেছেন ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এশিয়া প্যাসিফিক নিরাপত্তা বিষয়ক শাংরি-লা ডায়লগের জ্যেষ্ঠ ফেলো আলেক্সান্ডার নেইল।
“কুচকাওয়াজে অত্যাধুনিক অনেক মারণাস্ত্র প্রদর্শন করতে পারলেও চীন এখনও সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কয়েক দশক পিছিয়ে আছে,” বলেছেন তিনি।
বেইজিংও তাদের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতাকেই কারণ হিসেবে সামনে আনছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও ২০১৭ সালে চীনের সামরিক ব্যয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের এক-চতুর্থাংশ; জনসংখ্যার মাথাপিছু হিসেবে বেইজিংয়ের খরচ হচ্ছে ১০০ ডলার করে, যা ওয়াশিংটনের খরচের মাত্র ৫ শতাংশ, বলছে তারা।
গত বছর সামরিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় ছিল ৬৪৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার; যা চীনের প্রায় চারগুণ।