“সেখানে যেন নরকের আগুনে পুড়ছিলাম, প্রার্থনায় বসলেও মার খেতে হত, পড়াশুনা করলেও মার খেতে হত,” বিবিসি’ কে এমনটিই বলেছেন বেঁচে ফেরা ২৯ বছর বয়সী ইসা ইব্রাহিম।
নির্যাতন সইতে না পেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল জিবরিল নামের এক বালক। কাঁধের হাড় ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত দুইহাতে ঝুলিয়ে রাখা হয় তাকে।
আরেক কিশোর তার অভিজ্ঞতার বর্ণনায় জানিয়েছে, বালকদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। আর খাবার চুরি করতে গিয়ে কেউ ধরা পড়লে চাবুক মেরে তাকে রক্তাক্ত করা হত। গাড়ির ইঞ্জিনের বেল্ট এবং বৈদ্যুতিক তার দিয়ে মারা হত তাদেরকে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেউ কেউ যৌন নিপীড়নেরও শিকার হয়েছে। সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের গোপন খবর পেয়ে ওই মাদ্রাসাভবনে অভিযান চালিয়ে নির্যাতিতদের উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়িটিকে ‘নির্যাতন ভবন’ আখ্যা দিয় পুলিশ বলেছে, এখানে মানুষকে দাস বানিয়ে রাখা হত।
তবে এ প্রতিষ্ঠানটিকে মাদ্রাসা কিংবা সংশোধন ও আত্মশুদ্ধিকরণ প্রতিষ্ঠান ভেবে অনেকের অভিভাবকরাই ফি দিতেন। যদিও পুলিশ এবং আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রতিষ্ঠানের কোনো রেজিস্ট্রেশনই নেই।
নির্যাতন থেকে বেঁচে ফেরা ইব্রাহিম জানান, তার পরিবার দু’সপ্তাহ আগে তার আচরণ সংশোধনের জন্য তাকে ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছিল। পুলিশ সেখানে অভিযান চালানোর আরে দিনই তিনি সেখান থেকে পালাতে চেয়েছিলেন।
তার ওপরে চলা নির্মম নির্যাতনের বর্ণনায় ইব্রাহিম বলেন, তাকে পুরোনো জেনারেটরের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। আবার কখনো কখনো সিলিংয়ে দু হাত বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হত। এমনকী ঘুমালেও জাগিয়ে দেওয়া হত বেত মেরে। প্রায় সারা শরীরেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানান ইব্রাহিম।
তিনি আরো বলেন, তাকে অনাহারেও থাকতে হয়েছে। খেতে দেওয়া হত কেবলই ভাত। ওই প্রতিষ্ঠানে যারাই থেকেছে তারা সবারই সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে।
উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে অনেকেই আহত এবং অভুক্ত ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশও। তাছাড়া, উদ্ধার পাওয়াদের মধ্যে রয়েছে ৫ বছরের বালকও। মুক্তি পেয়ে তারা খুবই আনন্দিত । বন্দিদের বেশিরভাগই নাইজেরিয়ার। তবে দুইজন বুরকিনা ফাসোর বলে জানা গেছে।