বাইডেন তদন্তে ইউক্রেইনকে চাপ দিয়েছেন ট্রাম্প, বলছে মেমো

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২৫ জুলাইয়ের একটি ফোনকলে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে বারবার অনুরোধ করেছেন। এমনটিই দেখা গেছে হোয়াইট হাউজের ফোনকলের প্রতিলিপিতে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2019, 04:47 PM
Updated : 8 Jan 2021, 07:19 AM

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোনকলের ওই সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে এও দেখা গেছে যে, ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি এবং মার্কিন এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্তকাজ করার জন্যও বলেছিলেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে।

হোয়াইট হাউজের এ মেমো ডেমোক্র্যাটদের ট্রাম্পকে অভিশংসন করারই পট প্রস্তুত করবে।

জো বাইডেন ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তার বিরুদ্ধে বিদেশি সরকারকে তদন্তের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মঙ্গলবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিনিধি পরিষদের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দোষ প্রমাণিত হলে অভিশংসনের খড়গ ঝুলে রয়েছে ট্রাম্পের ওপর।

বুধবার হোয়াইট হাউজের মেমো প্রকাশের পর ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, “আসল ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার সাংবিধানিক দায়িত্ব ভঙ্গ করে এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও ষুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুন্ন করে তার রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিদেশি সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। এটা হতে দেওয়া যায় না। তাকে জবাবদিহি করতে হবে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নন।”

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক গোয়েন্দা তথ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কির কথোপকথনের বিষয়টি উঠে আসে। হোয়াইট হাউজের মেমোতে এবার সেটিই নিশ্চিত হয়েছে।

ডেমোক্রাটরা বলছেন, বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে উঠা একটি দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে ইউক্রেইন সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কথা মত কাজ না করলে তিনি এমনকি দেশটিকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকিও দেন।

যেভাবে সূত্রপাত এবং ঘনীভূত হয়েছে ইউক্রেইন বিতর্ক:

এবছর মে থেকে অগাস্ট পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বাইডেনের ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেইন সরকারকে চাপ দিয়ে এসেছেন। এ সময় ইউক্রেইনকে তদন্ত করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি দেশটিতে মার্কিন সামরিক সহায়তাও স্থগিত করে রেখেছিলেন ট্রাম্প।

*১৮ জুলাই: যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের সহকারীকে ইউক্রেইনে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

*২৫ জুলাই: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৩০ মিনিট ফোনে কথা বলেন।

* ৯ সেপ্টেম্বর: এ ফোন কল নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের কারো কাছ থেকে কেউ একজন অভিযোগ জানালে বিষয়টি কংগ্রেসের নজরে আসে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন নিয়মানুযায়ী ওই অভিযোগপত্র কংগ্রেসকে না পাঠিয়ে তা আটকে রাখে।

* ১১ সেপ্টম্বর: পেন্টাগন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ইউক্রেইনে সামরিক সহায়তার ছাড়পত্র দেয়।

* ১৮ সেপ্টেম্বর: ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ট্রাম্পের ফোনকল নিয়ে অভিযোগের বিস্তারিত প্রকাশ করে। ওই অভিযোগপত্রে একজন বিদেশি নেতার সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

*১৯ সেপ্টেম্বর: ওয়াশিংটন পোস্ট নিশ্চিত করে জানায় যে, বিষয়টি ইউক্রেইন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

* ২০ সেপ্টেম্বর: ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ জুলাইয়ের ফোনালাপে হান্টার বাইডেনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো একটি বিষয়ে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে তদন্ত করার জন্য চাপ দিয়েছেন ট্রাম্প।

*২২ সেপ্টেম্বর: বাইডেনের বিষয় নিয়ে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার কথা স্বীকার করেন ট্রাম্প।

*২৩ সেপ্টেম্বর: ট্রাম্প ইউক্রেইনে সামরিক সহায়তা স্থগিত রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন এবং বলেন, দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে তিনি এটি করেছেন।

*২৪ সেপ্টেম্বর: প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটিক নেতারা ট্রাম্পের ফোনালাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে হাউজ কমিটিগুলোর বৈঠক ডাকেন।

এর আগেই সোমবার ইউক্রেইনের সঙ্গে ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের যোগাযোগ নিয়ে হোয়াইট হাউজের কাছ থেকে নথি প্রকাশের দাবি জানান কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা। হাউজের গোয়েন্দা, পররাষ্ট্র ও তদারক কমিটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে যোগাযোগের নথি প্রকাশের দাবি জানায়।

*২৫ সেপ্টেম্বর: ট্রাম্প প্রশাসন হোয়াইট হাউজের ২৫ জুলাইয়ের ট্রাম্প-জেলেনস্কি ফোনকলের খসড়া প্রতিলিপি প্রকাশ করে।