মোদী ও বিল গেটসের ‘শৌচাগার বিড়ম্বনা’

‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জনগণকে বিনামূল্যে শৌচাগার বানিয়ে দিয়ে খোলা জায়গায় মলত্যাগ বন্ধে সাফল্যের স্বীকৃতি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিল গেটস ফাউন্ডেশন।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2019, 04:43 PM
Updated : 24 Sept 2019, 04:43 PM

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার ওই প্রকল্পের জন্য ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ থেকে পুরস্কার পাচ্ছেন এমন খবরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। মোদীকে পুরষ্কৃত করার বিরোধিতা করছেন অনেকেই। 

একটি টুইট বার্তা থেকে এ বিতর্কের সূত্রপাত। গেটস ফাউন্ডেশন মোদীকে সম্মাননা দেবে বলে টুইটারে গত ২ সেপ্টেম্বর পোস্ট দেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডা. জিতেন্দ্র সিং।

২০১৪ সালে প্রথম মেয়াদে ভারতের ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে জনগণকে শৌচাগার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ওই প্রকল্পের ঘোষণা দেয় মোদী সরকার। প্রকল্পের আওতায় ভারত জুড়ে হাজার হাজার শৌচাগার নির্মাণ করা হয়। রাজনীতির মাঠে মোদীর দল বিজেপি ওই প্রকল্পকে বরাবর নিজেদের সাফল্য বলে উল্লেখ করেছে।

বিজেপি নেতাদের দাবি, এখন ভারতের ৯০ শতাংশ মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করে। ২০১৪ সালের আগে যেটা ৪০ শতাংশের সামান্য বেশি ছিল। এবার দেশের বাইরে থেকেও এজন্য স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন মোদী। খোলা জায়গায় মল ত্যাগ বন্ধে মোদী সরকারের এ উদ্যোগের জন্যই তাকে ‘গ্লোবাল গোলকিপারস গোলস অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে গেটস ফাউন্ডেশন।

যদিও ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ আগেভাগেই আনুষ্ঠানিকভাবে মোদীকে ‘গোলকিপার’ পুরস্কারে ভূষিত করার ঘোষণা দেয়নি। বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের দিন পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম জানানো হবে। কিন্তু পুরস্কারের খবর নিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকার মুখে গেটস ফাউন্ডেশন স্বীকার করেছে যে, পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মোদীও একজন।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিবিসি’কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতে যে অগ্রগতি এসেছে’ তার জন্য তারা নরেন্দ্র মোদীকে সম্মান জানাবেন। 

কিন্তু পুরষ্কারটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ, গেইটস ফাউন্ডেশন থেকে সাধারণত মানুষের জীবন ব্যবস্থার উন্নয়নে একবারে তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিক এবং সমাজকর্মীদের ‘গোলকিপার’ পুরস্কার দেওয়া হয়। মোদীর সেই পুরস্কার পাওয়া নিয়ে তাই অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে।

অন্তত তিনজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মোদীকে এ স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

তাছাড়া, একটি পিটিশনে সাড়া দিয়ে এক লাখের বেশি মানুষ তাতে সাক্ষর করেছেন। বিনোদন জগতের কয়েকজন তারকাও আপত্তি তুলেছেন।

সমালোচনাটা বেশি হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে মোদীকে নিয়েই। ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার পর যিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। আর অতি সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে তার বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া এবং ওই অঞ্চলকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি নিয়েও সমালোচকরা সরব হয়েছেন।

মোদীকে পুরস্কৃত করে বিল গেটসের মত একজন বক্তিত্ব তার সরকারকেই আরো গৌরবান্বিত করছেন এবং বৈধতা দিচ্ছেন বলেও মত সমালোচকদের। তাছাড়া, কথা উঠেছে মোদীর শৌচাগার ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং তা কতটুকু সফল হয়েছে তা নিয়েও।

 মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ প্রকল্প কতটা সফল?

মোদীর এ প্রকল্পের আওতায় ভারতে শৌচাগারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগই হয় নষ্ট হয়ে গেছে বা শৌচকাজে ব্যবহার হয় না বলে বিবিসি’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

এর সবচেয়ে বড় কারণগুলো পানির অভাব থেকে শুরু করে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় গাফিলতিও আছে। সেইসঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং দীর্ঘদিনের অভ্যাসও ভূমিকা রাখছে।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের উত্তরাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকার মানুষ খোলা জায়গায় শৌচকাজ সারতে পছন্দ করেন বা তাদের কাছে স্বস্তিদায়ক মনে হয়।

দরিদ্র মানুষদের নিজবাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য সরকার কয়েক কিস্তিতে অর্থ দেয়। দেখা যায়, পুরো অর্থ পেতে এক বছর সময় লেগে যায়। ফলে দরিদ্র মানুষ শৌচাগার নির্মাণ শুরু করলেও তা আর শেষ করতে পারে না।