২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময়ে ঘটা নানা ঘটনা নিয়ে ‘ফর দ্য রেকর্ড’ নামে একটি বই লিখেছেন ক্যামেরন। বৃহস্পতিবার বইটি প্রকাশ পায়।
পরদিন যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইকে ক্যামেরনের বই নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। যেখানে সুচির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বইতে ক্যামেরনের বক্তব্য উঠে আসে।
বইতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির সঙ্গে ২০১২ সালের প্রথম সাক্ষাৎ নিয়ে নিজের আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে ক্যামেরনের প্রশংসাসূচক বাক্য, “আমি গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের নেতা অং সান সু চির সঙ্গে দেখা করেছি। যিনি শিগগিরিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন এবং ভোটে তার অসাধারণ জীবনের প্রতিফলন দেখা যাবে: ১৫ বছরের গৃহবন্দিত্ব থেকে নিজ দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পথে যাত্রা।”
১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর ২০১২ সালে ক্যামেরন প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটি সফর করেন। ওই সফরেই তিনি প্রথম সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
এক বছর পর ২০১৩ সালের অক্টোবরে লন্ডন সফরে যান সু চি। সেখানে তাদের আবার দেখা হয়। যদিও সেবারের সাক্ষাতের পর ক্যামেরনের মনভাব আর আগের মত ছিল না।
তিনি লেখেন, “যা হোক, ২০১৩ সালের অক্টোবরে তিনি লন্ডন সফরে আসেন। তখন সেখানে সবার মনযোগ ছিল তার দেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের অবস্থা নিয়ে, যাদেরকে বৌদ্ধ রাখাইনরা বাড়ি ছাড়া করছে। সেখানে ধর্ষণ, হত্যা ও জাতিগত নিধনের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। পুরো বিশ্ব তা দেখছিল, আমি তাকে ওই বিষয়ে বললে উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা আসল বার্মিজ নন, তারা বাংলাদেশি’।”
গত সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা এখনো গণহত্যার শিকার হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই সেখানে বসবাস করছে বলে জানানো হয়।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লিও এ সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় একই সমালোচনা করেন।
লি বলেন, “মিয়ানমার সরকার দেশটিতে (সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে) নৃশংসতা ও নিপীড়নের যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে তা থামাতে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। সেখানে রোহিঙ্গারা একই রকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে, যেটা ২০১৭ সালের অগাস্টের আগে থেকেই সেখানে বিরাজমান ছিল।”
২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্টে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় নয় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ওই রাজ্যে বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়।
হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়াসহ নানা নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা এখনো সেখানে রয়ে গেছে।
যদিও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের শিকার হওয়ার ইতিহাস আরো পুরানো। ২০১৩ সালে সেখানে বৌদ্ধ রাখাইন ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিপীড়ন নিয়ে প্রতিবাদ না করায় তখনই আন্তর্জাতিক মহলে দারুণ সমালোচিত হয়েছিলেন ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি।
এ বিষয়ে ২০১৩ সালে লন্ডন সফরের সময় বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সু চি বলেছিলেন, শুধু মুসলমানরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এমনটা নয়, বৌদ্ধরাও নৃশংসতার শিকার হচ্ছে।
“এই আতঙ্কই সব সমস্যার কারণ।”