আলোচনার দরজা খোলা: ট্রাম্পকে তালেবান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভবিষ্যতে কখনো শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চাইলে তার জন্য 'দরজা খোলা থাকবে' বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান বিদ্রোহীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2019, 08:33 AM
Updated : 18 Sept 2019, 08:33 AM

সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর প্রধান মধ্যস্থতাকারী শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই 'আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে আলোচনার পথই কেবল খোলা আছে' বলে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন।

সপ্তাহখানেক আগে ট্রাম্প তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলা আলোচনাকে 'মৃত' ঘোষণা করেছিলেন।

মঙ্গলবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির একটি নির্বাচনী জনসভায় ও রাজধানী কাবুলে তালেবানের পৃথক দুটি বোমা হামলায় ৪৮ জন নিহত হয়; এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তালেবানের ‘আলোচনার দরজা খোলা’ রাখার বিষয়টি জানা গেল।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে দুই পক্ষ ১৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিল।

ট্রাম্প ৮ সেপ্টেম্বর আফগান প্রেসিডেন্ট ঘানি ও জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে একটি গোপন বৈঠকেও ডেকেছিলেন। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর কাবুলে তালেবান হামলায় এক মার্কিন সৈন্যসহ ১২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে ট্রাম্প ওই বৈঠকটি বাতিল করে দেন।

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে তালেবানদের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়ে বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীটিকে 'শান্তির বিষয়ে সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন শুরুর' আহ্বান জানান।

স্টানিকজাই বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিনিদের উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তালেবান এখন পর্যন্ত অন্যায় কিছু করেনি।

"তাদের (মার্কিনিদের) হিসেবেই তারা প্রায় কয়েক হাজার তালেবানকে হত্যা করেছে। আর এখন কেবল একজন মার্কিন সেনা নিহতের সূত্র ধরে তারা এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনা, কেননা দুই পক্ষের মধ্যে এখনো কোন যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়নি," বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক লাইস ডুসেটকে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় তালেবান পক্ষের প্রধান মধ্যস্থতাকারী।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে দরজা খোলা রাখার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

"আমাদের দিক থেকে, আলোচনার দরজা খোলা। আমরা আশা করছি অন্যপক্ষও আলোচনা নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে," বলেছেন স্টানিকজাই।

চলতি মাসের শুরুতে দুই পক্ষ যে চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিল তাতে ২০ সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সৈন্য প্রত্যাহারের বিনিময়ে আফগানিস্তানকে বিদেশীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে চেয়েছিল তালেবান।

স্টানিকজাই জানান, ওই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরই তালেবান এবং বিদেশি বাহিনীগুলোর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারত।

অবশ্য এরপরও তালেবান এবং আফগান সরকারি বাহিনীর মধ্যে কোন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতো না বলে জানিয়েছেন তিনি।

২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আফগানিস্তানের সবচেয়ে বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান বাহিনী। বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীট  দেশটির পশ্চিমা সমর্থিত আশরাফ ঘানি প্রশাসনকে কখনোই স্বীকার করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে ঘানি সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি বসতেও আপত্তি জানিয়েছে  তারা।

স্টানিকজাই বলেছেন, চলতি মাসের ২৩ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া আন্তঃআফগান আলোচনায় কোনো চুক্তি হলে তাতে বিস্তৃত যুদ্ধবিরতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনায় সহায়তা করতে তালেবানরা চীন ও রাশিয়াকেও অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে কেবল অগাস্টেই গড়ে প্রতিদিন ৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছে বলে সংগৃহীত তথ্য থেকে জানিয়েছে বিবিসি।

স্টানিকজাই এ বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির জন্যও 'বিদেশি বাহিনীগুলোকে' দায়ী করেছেন। উদ্ধৃত করেছেন জাতিসংঘের দেয়া তথ্যকে, যেখানে ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদ্রোহীদের চেয়েও মার্কিন বাহিনী এবং আফগান বাহিনীর হাতে বেশি বেসামরিক নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।