পার্লামেন্ট স্থগিত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পার্লামেন্ট স্থগিতের বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য। শুরু হয়েছে দুটি আপিলের শুনানি। এর মধ্য দিয়েই জনসন আইনগতভাবে পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন কিনা তা নির্ধারিত হবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2019, 02:18 PM
Updated : 17 Sept 2019, 02:37 PM

জনসনের ৫ সপ্তাহের পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিতকে গত সপ্তাহে বেআইনি বলে রায় দিয়েছে স্কটল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে লন্ডনের হাইকোর্ট জনসনের পার্লামেন্ট স্থগিতকে বৈধ বলে রায় দেয়।

মঙ্গলবার এ দুই রায়ের বিরুদ্ধেই আপিলের শুনানি প্রক্রিয়া শুরু করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারের আবেদন স্কটিশ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে। আর লন্ডন হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন এক ব্যবসায়ী নারী ও প্রচারকর্মী গিনা মিলারের।

বিচারকরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিন দুই আপিলে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন। এরপর শুক্রবার রায় ঘোষণা করা হতে পারে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কয়েক শতাব্দীর মধ্যে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর নিস্পত্তি হতে চলেছে সুপ্রিম কোর্টে। এর পরিণতি হতে পারে খুবই গুরুতর। কোর্ট জনসনের বিপক্ষে রায় দিলে পার্লামেন্ট অধিবেশন ফের শুরু হতে পারে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার সিদ্ধান্ত সঠিক- এ যুক্তিতেই অটল আছেন। আদালতের শুনানিতে বলা হয়েছে, জনসন তার ব্রেক্সিট পরিকল্পনায় এমপিদের ‘বিরোধিতা’ এবং ‘নস্যাৎ করার’ ঝুঁকি এড়াতেই পার্লামেন্ট স্থগিত ঘোষণা করেছেন।

অন্যদিকে, অভিযোগকারী এমপিদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী এমপিদের তার পরিকল্পনার পথে ‘বাধা হিসেবেই দেখেন’ এবং তিনি তাদের ‘চুপ করিয়ে রাখতে চান’।

গত ১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট পরবর্তী পাঁচ সপ্তাহের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। ওইদিনই প্রতিনিধি পরিষধে এমপি’রা অভিনব কায়দায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

পার্লামেন্ট স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণাও ওইদিনই এসেছিল।

মামলার রায় যাই আসুক তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কোচ্ছেদের সময়ের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট লেডি হ্যালি। তিনি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি।

শুনানি শুরুর আগে উদ্বোধনী বক্তৃতায় লেডি হ্যালি বলেন, তিনি এবং তার ১০ সহকর্মী ‘এই মামলায় আইন নিয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল প্রশ্ন উঠেছে’ তার সমাধান করার চেষ্টা করবেন।

“বেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে যে অসংখ্য রাজনৈতিক প্রশ্ন আছে আদালত সেগুলোর উত্তর খুঁজতে যাবে না। এমনকি কখন ও কিভাবে ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ হবে তার উপরও আদালতের রায়ের কোনো প্রভাব থাকবে না।”

প্রধানমন্ত্রী জনসন যেভাবে কৌশল খাটিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে পার্লামেন্ট স্থগিতের অনুমোদন আদায় করেছেন তা আইনসঙ্গত কিনা তা-ই সুপ্রিম কোর্ট যাচাই করে দেখবে।

প্রধানমন্ত্রী জনসন তার পার্লামেন্ট স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যায় বলেছেন, আগামী ১৪ অক্টোবর রানি এলিজাবেথ নুতন সরকারের কার্মপরিকল্পনা নিয়ে পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন। সেই কাজ সুষ্ঠুভাবে করতেই পার্লামেন্টের সর্বশেষ অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে। সব সরকারের আমলেই এমনটা হয়ে থাকে।

“এর সঙ্গে আমার ব্রেক্সিট পরিকল্পনার কোনো সম্পর্ক নেই।”

আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ইইউ ছাড়তে হবে। জনসন সময় আর না বাড়িয়ে যেকোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়ে ব্রেক্সিট করতে চান। এজন্য প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট করতে হলেও তিনি তা করবেন।

অন্যদিকে, পার্লামেন্টের বেশিরভাগ এমপি ব্রেক্সিটের পক্ষে হলেও সরকারের মতো চুক্তিহীন ব্রেক্সিট চান না। ব্রেক্সিট নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য তারা দ্বিতীয়বার সময় বাড়ানোর অনুরোধ করার পক্ষে।

সরকারের চুক্তিহীন ব্রেক্সিট আটকাতে এবং সময় বাড়ানোর অনুরোধ করতে বাধ্য করতে পার্লামেন্টে নতুন একটি আইনও পাস হয়েছে।