টানা তিন মাস ধরে বেইজিংঘনিষ্ঠ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এ বিক্ষোভকারীরা চীন নিয়ন্ত্রিত শহরটিতে ‘ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ পরিকল্পনার অভিযোগও অস্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিচারের জন্য বাসিন্দাদের চীনের মূল ভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে আইনের সংশোধনী সংক্রান্ত একটি বিল নিয়ে জুন থেকে শুরু হওয়া তুমুল বিক্ষোভ ও সহিংসতা এরই মধ্যে হংকংয়ের অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞকে অনেকখানিই ধ্বসিয়ে দিয়েছে।
২২ বছর আগে যুক্তরাজ্যের হস্তান্তর করা এ শহরটির কারণেই চীনকে ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা’ চালাতে হচ্ছে।
আন্দোলনের মুখে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বিতর্কিত ওই প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহার করে নিলেও বিক্ষোভকারীরা এখন শহরটিতে আরও গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন চাইছেন।
মঙ্গলবার হংকংয়ের একটি স্টেডিয়ামে ইরানের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলায় জাতীয় সঙ্গীত চলাকালে অনেককে ধুয়ো দিতেও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বেইজিং শুরু থেকেই এ বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে আসছে। বিক্ষোভে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয়নি জানিয়ে তারা উল্টো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা দেশগুলোকে হংকংয়ের বিক্ষোভ উসকে দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করছে।
“সরকারবিরোধী উন্মত্তরা ১১ সেপ্টেম্বর গ্যাস পাইপ উড়িয়ে দেয়াসহ ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছে,” চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদমাধ্যম চায়না ডেইলির হংকং সংস্করণের ফেইসবুক পেইজে নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে ৯/১১ হামলার একটি ছবি দিয়ে এমন অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিক্ষোভকারীদের অনেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
“এটা যে মিথ্যা সংবাদ তা বুঝতে আমাদের এমনকি সংবাদটি খতিয়ে দেখারও প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে মোটেই ভাবে না,” বলেছেন ২৪ বছর বয়সী মাইকেল।
যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে বুধবার সব ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি বন্ধ রাখারও ঘোষণা দেয়া হয়।
“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংহতি হিসেবে, গান গাওয়া ও স্লোগান দেয়া ছাড়া ১১ সেপ্টেম্বর হংকংয়ে সব ধরনের বিক্ষোভ বন্ধ থাকবে,” বিবৃতিতে বলেছে বিক্ষোভকারীরা।
আন্দোলনরতদের একাংশ আবার চীনা গণমাধ্যমের এমন অবস্থানে উদ্বিগ্ন।
“যখন তারা সমগ্র আন্দোলনকে এসব শব্দের ভেতর পুরে ফেলার চেষ্টা করে, তখন তা আমাকে আতঙ্কিত করে। তারা প্রতিবেদন না করে অনুমান করে। আমার মনে হয় জনগণ যে আজ বিক্ষোভে বিরতি দিয়েছে, তা একটি চমৎকার পদক্ষেপ হয়েছে,” বলেছেন ২৩ বছর বয়সী কারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বিরোধের মধ্যে হংকংয়ে কয়েক মাসের এ অস্থিরতা শহরটিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে বলে বুধবার এক ভাষণে বলেছেন ক্যারি লাম।
“এক দেশ দুই ব্যবস্থার নীতি ও মৌল আইন (হংকংয়ের সংবিধান) উর্ধ্বে তুলে ধরে এবং হংকংয়ের সরকার ও জনগণের দৃঢ় প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বিরোধের মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস,” ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্ততায় বলেছেন এ প্রধান নির্বাহী।