যুক্তরাজ্যে পাঁচ সপ্তাহের পার্লামেন্ট মুলতবি শুরু, এমপি’দের প্রতিবাদ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। যার নজিরবিহীন প্রতিবাদ জানিয়েছেন এমপি’রা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2019, 02:41 PM
Updated : 10 Sept 2019, 02:41 PM

বিবিসি জানায়, এদিন হাউজ অব কমন্সের কয়েকজন এমপি ‘শেম অন ইউ’ বলে চিৎকার করেন এবং ‘সাইলেন্সড’ লেখা কাগজ হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দ্বিতীয়বারের মত আগাম নির্বাচন ডাকার প্রস্তাব পাস করাতে ব্যর্থ হওয়ার পর মঙ্গলবার ফের পার্লামেন্ট মুলতবি হল।

বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য সময় চাই বলে ‍যুক্তরাজ্য সরকার মাত্র কয়েকদিন আগেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে পার্লামেন্ট স্থগিতের অনুমোদন আদায় করেছিল।

বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এমপিদের একজোট হওয়া রুখতে এই কৌশল অবলম্বন করেছে।

তাই তারাও যেকোনো মূল্যে জনসনকে আটকাতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। যার অংশ হিসেবে ব্রিটিশ এমপি’রা সোমবার ভোটাভুটির মাধ্যমে দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী জনসনের অক্টোবরে আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

সোমবার রাতে জনসনের আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ২৯৩ জন এমপি, কিন্তু প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।

এর আগেও গত ৪ সেপ্টেম্বর হাউজ অব কমন্সে আগামী ১৫ অক্টোবর আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়ার  প্রস্তাব তুলেছিলেন জনসন,  কিন্তু প্রয়োজনীয় সমর্থন না পাওয়ায় সেটা নাকচ হয়েছিল।

বিরোধী দলের এমপিরা সোমবার জনসনের প্রস্তাবে সমর্থন না দিয়ে বরং চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে একটি আইনের ওপর জোর দিয়ে সেটি বাস্তবায়নের দাবি তোলেন। এই আইন অবজ্ঞা করলে জনসনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন তারা।

বিবিসি জানায়, ইতোমধ্যে ওই আইন পাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, ব্রাসেলসের সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তি হোক বা না হোক দেশটির ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করতে হবে।

কিন্তু সোমবার রাজকীয় সম্মতি পাওয়া নতুন আইন অনুযায়ী, এখন ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এমপি’রা চুক্তিসহ বা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিষয়ে অনুমোদন না দিলে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট পেছানোর আবেদন জানাতে বাধ্য হবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার মধ্যরাতের পর (ব্রিটিশ সময় রাত ২টার কিছুক্ষণ আগে) পার্লামেন্টর অধিবেশন আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত হয়েছে। তার আগে হাউজ অব কমন্সের স্পিকার জন বেরকাউ পদত্যাগ ঘোষণা করেন।

যদিও বেরকাউ চলে যাওয়ার সময় বিরোধী দলের ক্ষুব্ধ ব্যাকবেঞ্চাররা তাকে বাধা দিতে চেষ্টা করেন। রাতে অধিবেশনের শেষ দিকে এমপিরা  নিজেদের আসনে বসে উচ্চস্বরে ওয়েলশ ও স্কটিশ লোকসঙ্গীত গান।

যে পাঁচ সপ্তাহ পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে ওই সময়ে বিভিন্ন দল পার্লামেন্ট ভবনে তাদের বার্ষিক সমাবেশ আয়োজন করতে পারবে। কিন্তু কোনো বিতর্ক, ভোট বা  কমিটির পর্যালোচনা অধিবেশন আয়োজন হবে না।

এছাড়া এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনসনকে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না। আগের সূচী অনুযায়ী আগামী বুধবার জনসনের ব্রেক্সিট বিষয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

পার্লামেন্ট স্থগিত হওয়ার অর্থ এমপিরা পুনরায় না ফেরা পর্যন্ত আগাম নির্বাচনের আর কোনো প্রস্তাবে ভোট হওয়ার সুযোগ থাকছে না। সেক্ষেত্রে অন্তত নভেম্বর পর্যন্ত কোনো ভোট আয়োজন সম্ভব হবে না।

যুক্তরাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পর নিয়মিতই পার্লামেন্টে অধিবেশন স্থগিত করা হয়। ওই সময়ে নতুন সরকারের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে রানি কবে ভাষণ দেবেন তা ঠিক করা হয়।

কিন্তু এবার বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষণে এবং দীর্ঘদিনের জন্য অধিবেশন স্থগিত করায় নানা সমালোচনা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্ট স্থগিতের ক্ষমতা সম্পূর্ণ রুপে সরকারের হাতে। যাদিও মাঝে মধ্যে স্থগিতাদেশ স্থগিতে আদালতের দ্বারস্থ হতে দেখা যায়। কিন্তু শেষে পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়।

যুক্তরাজ্যের বর্তমান আইনে ব্রাসেলসের সঙ্গে বিচ্ছেদের বিষয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারুক বা না পারুক তাদের আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইইউ ছাড়তেই হবে।

জনসন বলেন, এই সময়ে তিনি ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করবেন।

“যদিও কোনা চুক্তি ছড়াই বিচ্ছেদের প্রস্তুতিও আমরা নিচ্ছি। এই পার্লামেন্ট আমাকে আটকাতে যত কৌশলই আবিষ্কার করুক, আমি পরোয়া করি না। জাতীয় স্বার্থে আমি একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাব। এই সরকার ব্রেক্সিট নিয়ে আর দেরি করবে না।”