“যতটুকু আমি জানি, ওটা মৃত,” সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় এক মার্কিন সেনা নিহতের ঘটনায় তালেবানদের দায় স্বীকারের পর ট্রাম্প কয়েকদিন আগে মৌলবাদী এ গোষ্ঠীটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এক গোপন বৈঠক বাতিল করার কথা জানান।
উভয় পক্ষই একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিল বলে গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারাই জানিয়েছিলেন।
তালেবানরা অবশ্য বলছে, আলোচনা বাতিল হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রই ‘বেশি ক্ষতিগ্রস্ত’ হবে।
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার মার্কিন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য; শান্তি আলোচনা ‘ভেস্তে যাওয়ায়’ দেশটিতে অবস্থান করা ১৪ হাজার সেনার কি হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা অবশ্যই সরে আসবো, কিন্তু সরে আসবো সঠিক সময়ে।”
তালেবানদের পাশাপাশি আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গেও মেরিল্যান্ডের অবকাশযাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে বসার পরিকল্পনা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের; পরে ওই বৈঠকও বাতিল হয়।
তালেবানদের চালানো হামলাকে ‘বিরাট বড় ভুল’ অভিহিত করে ট্রাম্প বলেছেন, “তারা ভেবেছিল, মানুষ মেরে তারা নিজেদেরকে দরকষাকষিতে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে।”
"আমাদের বৈঠকের সূচি নির্ধারিত ছিল। সেটা ছিল আমার চিন্তা, বৈঠকটি বাতিলের চিন্তাও আমারই। আমি এমনকি এ নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনাও করিনি,” নর্থ ক্যারোলাইনায় রাজনৈতিক সমাবেশের উদ্দেশ্যে হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগমুহুর্তে সাংবাদিকদের বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তালেবান হামলায় মার্কিন সেনাসহ ১২জন নিহতের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তারা এমন কিছু করেছে, যা তাদের করা একদমই উচিত ছিল না- এ কারণেই ক্যাম্প ডেভিডের বৈঠকটি আমি বাতিল করেছি।”
টুইন টাওয়ারে ৯/১১ হামলার বার্ষিকীর দিনকয়েক আগে তালেবানদের সঙ্গে ‘বৈঠকের’ সূচি নিয়ে যে সমালোচনা চলছে, ট্রাম্প তারও জবাব দিয়েছেন।
“বৈঠক ভালো জিনিস, খারাপ নয়,” বলেছেন তিনি।
বিবিসি বলছে, সাম্প্রতিক এক হামলার কারণ দেখিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তালেবানদের সঙ্গে আলোচনায় ‘ইতি’ টানার কথা বললেও, এ আলোচনার কোনো পর্যায়েই মৌলবাদী গোষ্ঠীটিকে আফগানিস্তানের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার কিংবা বিদেশি বাহিনীর ওপর হামলা স্থগিত রাখতে দেখা যায়নি।
কেবল চলতি বছরই তালেবান হামলায় ১৬ মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
৯/১১ হামলার পরিকল্পনাকারী জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদাকে আশ্রয় দেয়ার অজুহাতে ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানদের উৎখাত করলে দুই পক্ষের মধ্যে এ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ শুরু হয়।
তালেবানদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে জানান, শনিবার পর্যন্ত আলোচনা ‘ভালোভাবেই চলছিল'।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে একটি বিস্ফোরণের অজুহাতে শান্তি প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পরিপক্কতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতিরই বহিঃপ্রকাশ, বলেছেন তিনি।
উপসাগরীয় দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে ৯ দফার আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওই প্রস্তাবিত বৈঠকের সময় ঠিক হয়েছিল।
সেসব আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানরা ‘নীতিগতভাবে’ একটি শান্তি চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল বলে সোমবার মার্কিন শীর্ষ মধ্যস্থতাকারী জানিয়েছেন।
ওই সমঝোতায় যুক্তরাষ্ট্রকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে ৫ হাজার ৪০০ সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে তালেবানরা আফগানিস্তানকে আর কখনোই সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হবে না এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর আক্রমণের পর এখনই তালেবানদের হাতে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি ঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত এ মৌলবাদী গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে।