ডোরিয়ান: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০, নিখোঁজ ‘অগণিত’

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ানে বাহামাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ এ পৌঁছেছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2019, 04:43 AM
Updated : 6 Sept 2019, 04:54 AM

আটলান্টিক মহাসাগর থেকে উঠে আসা ৫ মাত্রার এ হারিকেনের তাণ্ডবে নিখোঁজের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত না হওয়ায় মৃতের সংখ্যা ‘অবিশ্বাস্যরকমের বেশি’ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। 

দ্বীপপুঞ্জটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আবাকো দ্বীপে মৃতদেহ মুড়ে রাখার জন্য অতিরিক্ত ২০০টি ব্যাগ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাহামাসের উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ডোরিয়ান এখন অনেকখানি দুর্বল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনা উপকূলের পথে রয়েছে।

ক্যারিবীয় অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আঘাত হানা এ শক্তিশালী ঝড়ে আবাকো ও গ্র্যান্ড বাহামায় নিখোঁজের সংখ্যা কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।

বৃহস্পতিবার বাহামাসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডুয়ানে স্যান্ডস ডোরিয়ানে নিহতের সংখ্যা ‘হতভম্ব করে দিতে’ পারে বলে সতর্ক করেছেন।

স্থানীয় এক রেডিওতে তিনি বলেছেন, “মানুষের ভোগান্তি ও মৃতের সংখ্যা সম্বন্ধে অবিশ্বাস্য তথ্যের ব্যাপারে জনগণের প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন।”

দ্বীপটির ৭৬ হাজারের বেশি মানুষের মানবিক ত্রাণ সাহায্য প্রয়োজন বলে ধারণা দিয়েছে জাতিসংঘ।

দুর্যোগ পরবর্তী পরস্থিতি মোকাবেলায় স্যান্ডস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের সহযোগিতাও চেয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আবাকো দ্বীপটি কার্যত বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ, পানি ও খাদ্য সংকটে সেখানকার পরিস্থিতি সঙ্গীন। লুটপাট ঠেকাতে দ্বীপটিতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।

বিমান থেকে ধারণ করা ভিডিওতে আবাকো দ্বীপে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হয়েছে। দ্বীপটির বন্দর, দোকানপাট ও কর্মস্থল, একটি হাসপাতাল ও বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এরমধ্যে কোনো কোনোটি খণ্ড খণ্ড হয়ে উড়ে গেছে।

দ্বীপটিতে এরই মধ্যে কিছু পরিমাণ ত্রাণও পৌঁছেছে। উদ্ধারকর্মীরা মৃতদেহের পাশাপাশি নিখোঁজদের সন্ধানেও তৎপরতা বাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাহামাসের ২০১ জনকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে মার্কিন কোস্ট গার্ড।

ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৫ মাইল গতির বাতাস নিয়ে আছড়ে পড়া এ ঘূর্ণিঝড়টি মুহুর্তের মধ্যে ছোট ভাই আদ্রিয়ানকে উড়িয়ে নিয়ে যায় বলে জানান বাহামাসে ঝড়ের তাণ্ডবলীলার প্রত্যক্ষদর্শী রিচার্ড জনসন।

ছয় বছরের আদ্রিয়ানের পক্ষে ওই হারিকেনের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না, বলেছেন তিনি।

“কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাতাসের ঝাপটা ছোট ছেলেটিকে ছাদ থেকে উড়িয়ে পানিতে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি যা, তাতে আমি (তাকে নিয়ে) আশাবাদী হতে পারছি না,” রয়টার্সকে বলেছেন আবাকোর এ বাসিন্দা।

নিখোঁজদের মধ্যে আদ্রিয়ানের মধ্যে এমন অসংখ্য শিশু থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। মঙ্গলবার ঝড় শেষের পর থেকে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের সন্ধানে দ্বীপটি চষে বেড়াচ্ছেন।

এর মধ্যেই সেখানকার বেশকিছু এলাকায় তুমুল লুটপাট চলছে বলে এক আলোকচিত্রী জানিয়েছেন। ম্যাশ হারবার নামের এক এলাকায় তিনি বাসিন্দাদের মদের দোকান ও সুপারমার্কেটে লুটপাট চালিয়ে ব্যাগে ও গাড়িতে করে জিনিসপত্র নিয়ে যেতেও দেখেছেন।

দুর্বল হয়ে ২ মাত্রার ঝড়ে পরিণত হওয়া ডোরিয়ান নিয়েও সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনা উপকূলের বাসিন্দাদের সাবধানে থাকতে বলেছে মার্কিন আবহাওয়া বিভাগ।

অপেক্ষাকৃত উষ্ণ জলভাগের ওপর দিয়ে এগোতে থাকায় শক্তি সঞ্চয় করে এটি ফের চার মাত্রার হারিকেনের রূপ নিতে পারে বলেও সতর্ক করেছে তারা।