‘পারলে পদত্যাগ করতেন’ হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লাম

রাজনৈতিক সংকটের সূচনা করে ‘ক্ষমার অযোগ্য বিপর্যয়’ ডেকে এনেছেন, এমন আক্ষেপ করে সুযোগ থাকলে পদত্যাগ করতেন বলে মন্তব্য করেছেন হংকংয়ের প্রধান নিবার্হী ক্যারি লাম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2019, 06:30 AM
Updated : 3 Sept 2019, 06:30 AM

একটি অডিও রেকর্ডিয়ের ভাষ্য অনুযায়ী গত সপ্তাহে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

বৈঠকে ওই প্রতিনিধি দলকে লাম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনার এ সময়ে হংকংয়ের অস্থিরতা চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয় হয়ে যাওয়ায় এ সংকট সমাধানে তার ক্ষমতা ‘অত্যন্ত সীমিত’ হয়ে পড়েছে।

“যদি সুযোগ থাকতো প্রথমেই আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতাম,” ইংরেজি ভাষায় বলেছেন তিনি।

লামের নাটকীয় ও কখনও কখনও বেদনামিশ্রিত মন্তব্যগুলোতে হংকংয়ের অস্থিরতা নিয়ে তদন্তরত চীনা নেতৃবৃন্দের চিন্তাভাবনা সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। ১৯৮৯ সালে তিয়ানয়ানমেন স্কয়ারের প্রতিবাদের ঘটনার পর হংকংয়েই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে চীন।

চীনের মূলভূখণ্ডে বন্দি প্রত্যর্পণের সুযোগ রেখে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে জুন থেকে হংকংয়ে টানা আন্দোলন চলছে। কখনও কখনও সহিংস হয়ে ওঠা ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে লাম প্রথমে প্রস্তাবিত বিলকে ‘মৃত’ঘোষণা করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ওই বিল সম্পূর্ণ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে, যা প্রত্যাখ্যান করেছে লামের সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হংকংয়ের তিন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রবল চাপের মুখে লাম ওই বিল বাতিল করতে চাইছেন, কিন্তু বেইজিংয়ের আপত্তিতে তা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে বেইজিং বিক্ষোভ দমনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়নি বলে ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জানিয়েছেন লাম। এমনকী ১ অক্টোবর জাতীয় দিবস উদযাপনের আগে সংকট সমাধানের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। হংকংয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনাও বেইজিংয়ের নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

কোনো ইস্যু যখন ‘সার্বভৌমত্ব ও নিরপত্তার মতো জাতীয় পর্যায়ে’ উঠে যায় তখন তার হাতে থাকা বিকল্পও কমে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে সুযোগ, প্রধান নির্বাহীর রাজনৈতিক সুযোগ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে যাকে সংবিধানের অধীনে দুই প্রভুকে সেবা দিতে হয়, কেন্দ্রীয় জনগণের সরকারকে ও হংকংয়ের জনগণকে, রাজনৈতিক সুযোগ খুব, খুব, খুব সীমিত হয়ে পড়ে।”

প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলা কথাবার্তায় লাম এসব মন্তব্য করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন তিন ব্যক্তি। লামের মন্তব্যের ২৪ মিনিটের রেকর্ডিং তাদের কাছে আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

তিনি ‘হংকংয়ের সব ধরনের লোকের সঙ্গে’ বৈঠক করে চলছেন বলে জানিয়েছেন লাম; ওই বৈঠকটি সেই অনেকগুলো ‘রুদ্ধদ্বার বৈঠকের’ একটি ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এ বিষয়ে রয়টার্সকে লামের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে দুটি অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন যেখানে ব্যবসায়ীরাও ছিল এবং দুটিই একান্ত বৈঠক ছিল।

“তাই ওই অনুষ্ঠানগুলোতে প্রধান নির্বাহী কী বলেছেন তা নিয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থানে নেই আমরা,” বলেছেন ওই মুখপাত্র। 

চীনের মন্ত্রিসভার অধীনস্ত উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা চীনের হংকং এবং ম্যাকাও সম্পর্কিত দপ্তর ‘স্টেট কাউন্সিল’ এ বিষয়ে রয়টার্সের পেশ করার প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। স্টেট কাউন্সিলের তথ্য দপ্তরও রয়টার্সের প্রশ্নের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দেয়নি।