আমাজনে আগুন: চাপে পড়ে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা বোলসোনেরোর

আমাজনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় সেখানে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2019, 06:12 AM
Updated : 24 August 2019, 06:23 AM

শুক্রবার তিনি আদিবাসীদের ভূমি, সীমান্ত এলাকা ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগারগুলোর সুরক্ষায় চিরহরিৎ বনটিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ইউরোপীয় দেশগুলোর দেয়া তীব্র চাপের মুখে অনেকটা বাধ্য হয়েই বোলসোনেরো এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

টানা কয়েকদিনের অগ্নিকাণ্ডের পরও ব্রাজিলের দিক থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে না পেয়ে ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অনুমোদন না করার হুমকি দেয়।

ব্রাজিল ছাড়াও ওই চুক্তিতে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে আছে।

আমাজনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্রাজিলের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ ফিনল্যান্ড দেশটি থেকে গো-মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করতেও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনুরোধ করে।

ইউরোপের নেতাদের এমন অবস্থানের পর সুর নরম করে বোলসোনেরো বলেন, দাবানল শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অজুহাত হতে পারে না।

কট্টর ডানপন্থি এ প্রেসিডেন্টের আমাজন নীতির কারণেই এবারের এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই আমাজন বনাঞ্চলে রেকর্ড সংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটার কথা জানিয়েছে।

দেশটির দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, উপগ্রহের তথ্যে গত বছর একই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লাগার চিত্র দেখা গেছে।

শুষ্ক মৌসুমে আমাজনে এমনিতেও দাবানল দেখা যায়। যদিও এবারের এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে মানুষের হাত আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, বোলসোনেরোর নীতিই কাঠুরে ও চোরাকারবারিদের বন উজাড়ে উৎসাহ দিচ্ছে।

শুক্রবার ব্রাজিলের বিভিন্ন শহরে সরকারের আমাজন নীতি ও আগুন নেভাতে অনাগ্রহের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ব্রাজিল দূতাবাসগুলোর বাইরেও প্রতিবাদ কর্মসূচি দেখা গেছে।

বিবিসি জানায়, শুক্রবার বোলসোনেরোর আদেশে আমাজনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রাজিলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফার্নান্দো আজেভেদোকে।

প্রাথমিকভাবে ২৪ অগাস্ট থেকে একমাসের জন্য এ সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিরহরিৎ বনাঞ্চল আমাজন বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা রেখে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতিকে খানিকটা শ্লথ রেখেছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে আমাজনের আগুনকে ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে বলেছেন, “বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের মধ্যে আমরা অক্সিজেন ও জীববৈচিত্রের অন্যতম প্রধান উৎসের এমন ক্ষতি মেনে নিতে পারি না। আমাজনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।”

শুক্রবার বোলসোনেরোর সঙ্গে ফোনালাপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আমাজনের আগুন নেভাতে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

“আমি তাকে বলেছি আমাজন বনাঞ্চলের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যদি কোনো সহায়তা করতে হয়, আমরা প্রস্তুত,” টুইটারে বলেছেন তিনি।