জ্বলছে পৃথিবীর ফুসফুস

চলতি বছর ব্রাজিলের আমাজন বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পুড়তে থাকা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই বনাঞ্চল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2019, 11:11 AM
Updated : 23 August 2019, 11:29 AM

আসন্ন জি-৭ সম্মেলনে আমাজনে অগ্নিকাণ্ড আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

ম্যাক্রোঁ টুইটারে লেখেন, “আমাদের ঘর জ্বলছে।”

তার এ মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো।

ম্যাক্রোঁ ‘রাজনৈতিক সুবিধা লাভের’ জন্য আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ তার।

ব্রাজিল জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করায় সেখানে এ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে আলোচনা ‘ভুল স্থানে উপনিবেশবাদী মানসিকতা’ উন্মোচিত করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ব্রাজিলের বনাঞ্চলে যে আগুন জ্বলছে তা গভীর উদ্বেগজনক।

“বনাঞ্চল আমাদের ফুসফুস এবং জীবন রক্ষা ব্যবস্থা।”

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আমাজন বনাঞ্চলে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া আগুনের ছবি প্রকাশের পর রাজনীতিবীদ থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রের তারকাসহ সাধারণ মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #প্রেফরআমাজন চালু করা হয়।

হলিউড তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও তার প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ অনুসারীকে পরিবেশের প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পৃথিবীর ফুসফুস জ্বলছে।”

উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইনপে জানায়, চলতি বছর প্রথম আট মাসে ব্রাজিল জুড়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগই হয়েছে আমাজন অঞ্চলে।

পরিবেশবাদীরা এজন্য আমাজন নিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো সরকারের নীতিকে দায়ী করছেন। কট্টর ডানপন্থি এ প্রেসিডেন্ট বন উজাড়ে কাঠুরে ও কৃষকদের উৎসাহিত করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

আগুনে ‍উত্তরের অঙ্গরাজ্য রনডোনিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওই অঞ্চলের আদিবাসী নেতারা বলেন, বনে আগুন লাগার পর তারা বন্যপ্রাণীদের প্রাণভয়ে বন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেখছেন।

কারিপুনা আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা আদ্রিয়ানো কারিপুনা বলেন, “অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বন্যপ্রাণী আমাদের চোখে পড়ছে। বন ধোঁয়ায় ঢাকা পড়েছে, আকাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। ধোঁয়ার ঝাঁজে আমাদের চোখে জ্বলুনি হচ্ছে এবং চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।”

আমাজনে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রেসিডেন্ট বোলসোনেরো প্রথমে এনজিওকে দায়ী করলেও তার ওই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

পরে অবশ্য তিনি নিজের ওই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে বৃহস্পতিবার বলেন,  “কৃষকরাও বনে আগুন দিতে পারে।”

অন্যদিকে আদিবাসীরা আঙ্গুল তুলছেন কাঠুরেদের দিকে।

কারিপুনা নেতা বলেন, বোলসোনেরোর নীতির কারণে কাঠুরেরা বনের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের সাহস পাচ্ছে।

“তিনি তাদের সহাস দিয়েছেন। তিনি তাদের আমাদের এলাকায় হানা দিতে বলেছেন।”

আইনের মাধ্যমে আদিবাসীদের ভূমি সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে আমাজানের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে লাভবান হওয়ার পথে ‘অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা’ বলে মনে করেন বোলসোনেরো।