ফুঁসছে কাশ্মীর, শুক্রবার গণআন্দোলনের ডাক

কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা স্থানীয় জনগণকে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এসে পদযাত্রায় যোগ দেওয়ার ডাক দিয়েছেন।

>>রয়টার্স
Published : 21 August 2019, 02:19 PM
Updated : 21 August 2019, 03:40 PM

মঙ্গলবার রাতভর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধান নগরী শ্রীনগরে জনগণকে এ আন্দোলনে নামার ডাক দিয়ে ছাপা পোস্টার ছড়ানো হয়। গত ৫ অগাস্ট ভারত সরকার জম্মু ও ‍কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর কাশ্মীরে এই প্রথম এভাবে প্রতিবাদের ডাক এল।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রোধের পরপরই সেখানকার প্রায় তিন শতাধিক রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের অনেকেই ভারত সরকার বিরোধী এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করেছেন।

শ্রীনগরে ছড়ানো পোস্টারের মধ্যে একটিতে লেখা ছিল, “সব মানুষ, তরুণ ও বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারী সবার উচিত জুমার নামাজের পর মিছিলে যোগ দেওয়া।” দ্য ‘জয়েন্ট রেজিসটেন্স লিডারশিপ’ এর নামে এ পোস্টার ছাপা হয়েছে। যেটি কাশ্মীরের বৃহৎ সব বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের প্রতিনিধিত্ব করছে।

পোস্টারে লোকজনকে শ্রীনগরে অবস্থিত জাতিসংঘের মিলিটারি অবজারভার গ্রুপের কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৯৪৯ সালে ভারত-পাকিস্তান প্রথম যুদ্ধের পর শ্রীনগরে জাতিসংঘের এ প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করতে চাইছিল। সরকার তাদের সেই প্রচেষ্টায় সফল হলেও কাশ্মীরের বৈধ স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করে নেওয়া আদতে কারো জন্যই ভালো হবে না বলে মত সমালোচকদের।

তাদের মতে, এর ফলে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আন্দোলনের পালে আরো হাওয়া লাগবে এবং তা ৩০ বছর ধরে জ্বলতে থাকা কাশ্মীরের বিদ্রোহের আগুনে ঘি ঢালবে।

বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগের দিন থেকেই বাড়তি নিরাপত্তা জন্য কাশ্মীরজুড়ে অতিরিক্ত হাজার হাজার সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কারফিউ জারি ছিল। ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এখন কারফিউ না থাকলেও সদ্য সাবেক রাজধানী শ্রীনগরে চলাচলের উপর নানা বিধি-নিষেধ রয়েছে।

এত নিরাপত্তা কড়াকড়ির মধ্যেও প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ থেমে নেই। বিশেষ কয়ে শ্রীনগরের নানা জায়গায় শুরু থেকেই খণ্ডখণ্ড বিক্ষোভের খবর এসেছে নানা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

ওদিকে, উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লায়  বুধবার  নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বন্দুকযুদ্ধে দুই জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার পর তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়।

শুক্রবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে ক্ষুব্ধ এক কাশ্মীরি বলেন, কেন্দ্র সরকার হাজার হাজার বহিরাগতকে এখানে পাঠিয়ে কাশ্মীরের জনমিতি পরিবর্তন করে ফেলার পরিকল্পনা করেছে।

তিনি ধর্মীয় নেতাদের জুমার নামাজের খুৎবায় এ আশঙ্কা নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন।

শ্রীনগরের যেসব এলাকায় বিক্ষোভ হচ্ছে সেখানকার সাধারণ মানুষ শুক্রবারের বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে চেষ্টা করবেন বলে জানায় রয়টার্স্।

মধ্য-বয়সী একজন বলেন, “আমরা চেষ্টা করব, লোকজন যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু জানি না তারা আমাদের যেতে দেবে কিনা।”