চলতি বছর আমাজন বনাঞ্চলে রেকর্ড সংখ্যক অগ্নিকাণ্ড

ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই আমাজন বনাঞ্চলে রেকর্ড সংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2019, 10:04 AM
Updated : 21 August 2019, 10:17 AM

দেশটির দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, উপগ্রহের তথ্যে গত বছর একই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৩ শতাংশ বেশি আগুন লাগার চিত্র দেখা গেছে।

বন উজাড়ের তথ্য নিয়ে বিতর্কের জেরে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো এ মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার এক সপ্তাহ পর আমাজন বনাঞ্চল নিয়ে এ উদ্বেগজনক খবর এল।

চিরহরিৎ এ বনের আগুন থেকে আসা ধোঁয়ার কারণে সোমবার সাও পাওলো শহরে দিনের বেলায়ই অন্ধকার নেমে এসেছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।

আমাজোনাস ও রোনডোনিয়া রাজ্যের বনাঞ্চলে লাগা আগুনের ধোঁয়া দুই হাজার ৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সাও পাওলোতে এলে সোমবার বিকাল ৩টার পর থেকে ঘণ্টাখানেকের শহরটি অন্ধকারে ডুবে ছিল।

বনের আগুন থেকে আসা ধোঁয়ার কারণে সাও পাওলো শহরে দিনের বেলায়ই অন্ধকার নেমে আসে। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিরহরিৎ বনাঞ্চল আমাজন বিপুল পরিমাণ কার্বন জমা রেখে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতিকে খানিকটা শ্লথ রেখেছে।

ব্রাজিলের কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট বোলসোনেরো কাঠুরে ও কৃষকদের বনটি উজাড়ে উৎসাহ দিচ্ছেন বলে পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলেছে, আমাজন অবববাহিকায় এ বছর অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের গড় অগ্নিকাণ্ডের তুলনায় কম।

আমাজোনাস ও রোনডোনিয়াতে বাড়লেও মাতো গ্রোসো ও পারা রাজ্যে আগুন লাগার পরিমাণ কমেছে বলে জানিয়েছে তারা।

বিবিসি বলছে, ব্রাজিলে শুষ্ক মৌসুমে দাবানল স্বাভাবিক হলেও গবাদিপশুর চারণভূমি সৃষ্টি করতে আমাজনের অনেক এলাকায় ইচ্ছা করেও আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে।

ইনপে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ৭২ হাজারেরও বেশি অগ্নিকাণ্ড শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে। ২০১৩ সালে আমাজনের অগ্নিকাণ্ডের রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ।

২০১৮ সালে হওয়া অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজারেরও কম।

ব্রাজিলের এ মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি বলছে, তারা কেবল বৃহস্পতিবার থেকেই সাড়ে ৯ হাজারের বেশি দাবানল দেখেছেন, যার অধিকাংশই আমাজন অঞ্চলের।

উপগ্রহের ছবিতে ব্রাজিলের একেবারে উত্তরের রাজ্য রোরাইমা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে আছে বলে দেখা গেছে; অগ্নিকাণ্ডের কারণে পার্শ্ববর্তী আমাজোনাসে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

বোলসোনেরো অবশ্য ইনপের নতুন এ তথ্যও উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এখন চলছে ‘ক্যেমাদার মৌসুম’, এসময়ে কৃষকরা জমি সাফ করতে আগুন ব্যবহার করে।

অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) আমাজন কর্মসূচির প্রধান রিকার্ডো মেলো বলেছেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন তথ্যে বনাঞ্চল উজাড়ের মাত্রা বাড়ার যে চিত্র পাওয়া গেছে তারই ধারাবাহিকতায় এ অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বাড়ছে।

আমাজন এলাকায় বনাঞ্চল উজাড়ের পরিমাণ বাড়ার তথ্য নিয়েই সম্প্রতি ইনপের সঙ্গে বোলসোনেরোর বিরোধ দেখা গেছে।

গত মাসে ব্রাজিলের এ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জুনে আমাজনে অরণ্য বিনাশের পরিমাণ গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৮৮ শতাংশ বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছিল।

বোলসোনেরো এ তথ্য প্রত্যাখ্যান করে তার সরকারকে অপদস্থ করতেই ইনপের পরিচালক মিথ্যা বলেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন।

এ নিয়ে বিতর্কের জেরে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির পরিচালককে পরে বরখাস্ত করা হয়।