পানি সঙ্কটের হুমকিতে জার্মানি

কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মকালের তীব্র গরমে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে জার্মানির বেশ কিছু অঞ্চলে৷

>> ডয়চে ভেলে বাংলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2019, 08:40 AM
Updated : 15 August 2019, 08:40 AM

চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশটির কয়েকটি রাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছে৷ সে সময় নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া কর্তৃপক্ষের তৈরি করা একটি অ্যাপে দেখা গেছে, ওই রাজ্যে খাবার পানির যথেষ্ট মজুদ নেই৷ একই ঘটনা ঘটেছে লোয়ার স্যাক্সনিতেও৷

লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠন লুটস নয়েবাউয়ার বলছে, জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রতিবছর পানির স্তর ১.৫ থেকে ২ সেন্টিমিটার করে নেমে যাচ্ছে। আর তাতেই ওই এলাকায় ধীরে ধীরে খাবার পানির সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা জাগছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথেষ্ট বৃষ্টি না হওয়ায় এ সঙ্কট আরো বাড়ছে৷ তীব্র গরমে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। মানুষের প্রয়োজনে ও গাছপালায় দিতে বেশি পানি লাগছে। গরমের কারণে নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে অনেকেই তাদের সুইমিং পুলের পানি বার বার পরিবর্তন করেছেন৷

সুইমিং পুলে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের কারণে ওই রাজ্যে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করেছে কর্তৃপক্ষ৷

বাড়ছে কৃষিকাজে পানির ব্যবহার

কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া  কৃষকেরাও তাদের জমিতে পাইপে সরবরাহ করা বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে৷

জার্মানির পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএ-এর বিশেষজ্ঞ ইয়র্গ রেচেনব্যার্গ বলেন, ‘‘পানির জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে৷ আর তাই আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে এ পানির সঙ্কটট মেটানো যায়৷''

গ্রীষ্মকালীন উষ্ণ তাপমাত্রা এবং কম বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকরা ভূগর্ভের পানি ব্যবহার বাড়িয়েছে৷ কৃষিকাজে পানির সঙ্কট বাড়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে লুটস নয়েবাউয়ার নামের সংগঠনটি জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের অনেক কৃষক কর্তৃপক্ষের কাছে ভূগর্ভের পানি ব্যবহারের অনুমতি চাইছে৷

বৃষ্টির পানি ব্যবহারের পরিকল্পনা

লোয়ার স্যাক্সনির লোহনে শহরের মেয়র টবিয়াস গের্ডেসমেয়ার বলেন, কৃষকরা ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে৷ এমনকি খামারিরাও পানির সংকট মোকাবেলায় ভূগর্ভের পানি ব্যবহার করার কথা ভাবছে৷

এ সঙ্কট মোকাবেলায় নতুন কোনো পদ্ধতি খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখার জন্য তারা বড় আকৃতির বেসিন তৈরির পরিকল্পনা করছেন৷

জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ওল্ডেনবুর্গ-ইস্ট ফ্রিসিয়ান ওয়াটার অ্যাসোশিয়েসন নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ লোয়ার স্যাক্সনি অঞ্চলে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দশ লাখ গ্রাহক রয়েছে যার অর্ধেকেরই বেশি হলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান৷

তারা বলছে, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানিতে গত ৭১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পানির ব্যবহার হয়েছে৷

পানি বিশেষজ্ঞ রেচেনব্যার্গ মনে করেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে আতঙ্কিত হতে হবে। তবে সময়ের সাথে সাথে নতনু উদ্ভাবনী ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে পানির সঙ্কট গভীর না হয়৷

কয়েক মাস আগে জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘পানির ভবিষ্যৎ' শিরোনামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা তাতে অংশ নিয়ে সঙ্কট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করার ওপর জোর দেন।