টেক্সাসে হামলা: শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদই কারণ?

টেক্সাসে ওয়ালমার্টের বিপণিবিতানে তরুণ বন্দুকধারী কী কারণে এত মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন পুলিশ ও এফবিআইর তদন্ত কর্মকর্তারা।

>>রয়টার্স
Published : 4 August 2019, 03:09 PM
Updated : 4 August 2019, 03:09 PM

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের কয়েক মাইল দূরের শহর এল পাসোর সিয়েলো ভিস্তা শপিং মলে ওয়ালমার্টের ওই শোরুমে স্থানীয় সময় শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ হামলা হয়।

পরে পুলিশ সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে ২১ বছরের এক শ্বেতাঙ্গ তরুণকে গ্রেপ্তার করে। ওই তরুণ এল পাসোর ৬৫০ মাইল পূর্বের শহর অ্যালেনের বাসিন্দা।

সকালের ব্যস্ত সময়ে যখন ওয়ালমার্টে হামলা হয় তখন সেখানে অনেক ক্রেতা ছিলেন। হামলায় ২০ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এল পাসো টাইমস বলেছে, গুলিবিদ্ধ অন্তত ১১ জনকে চিকিৎসার জন্য শহরের ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

হামলার পরপরই টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এ হামলাকে ‘ঘৃণা থেকে সংগঠিত অপরাধ’ বলে বর্ণনা করেন।

স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের বরাত দিয়ে হামলাকারীর নাম প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস বলে জানায়। হামলাটি ‘হেট ক্রাইম’ কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

হামলার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর এক সংবাদ সম্মেলনে এল পাসো পুলিশের মুখপাত্র সার্জেন্ট রবার্ট গোমেজ বলেন, পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়া, হামলার ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

ডালাসের কয়েকজন রাজনীতিবীদের বক্তব্য, বন্দুকধারী স্থানীয় নন। তিনি কয়েকশ মাইল ভ্রমণ করে শুধু এ গণহত্যা চালাতে ডালাসে আসেন।

আসলেই ওই ব্যক্তি কোথা থেকে এসেছেন বা কতদিন ধরে ডালাসে অবস্থান করছেন যে বিষয়ে এখনই কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি পুলিশ মুখপাত্র গোমেজ।

টেক্সাস পুলিশ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ‘৮চেন’ এ তারা অভিবাসন-বিরোধী একটি ঘোষণাপত্র পেয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত তরুণ এ মেনিফেস্টো পোস্ট করেছেন বলে ধারণা পুলিশের।

এতে টেক্সাসে ‘হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর আধিক্যের কারণে’ হামলা চালানো হয়েছে বলা হয়। গত মার্চে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে গুলি করে ৫১ জনকে হত্যার ঘটনাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে এতে।

তাছাড়া, জাতি ও বর্ণের ভিত্তিতে আমেরিকাকে আলাদা করার পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণসহ মেনিফেস্টোতে বিদেশিরা শ্বেতাঙ্গদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে বলেও সতর্ক করা হয়। বন্দুকধারীই এ মেনিফেস্টো লিখেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং পুলিশ।

আগামী বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারের লড়াই শুরু হয়ে গেছে।

গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় কয়েকজন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী এজন্য দেশটিতে চলমান অস্ত্র আইনের সমালোচনা করেছেন। তারা বন্দুক হাতে নৃশংসতা নিয়ন্ত্রণে কঠোর অস্ত্র আইন প্রনয়নের আহ্বানও জানিয়েছেন।

ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সাউথ বেন্ডের মেয়র পিট বুটিগিগ এবং সাবেক কংগ্রেস সদস্য বেতো ও’রোউর্ক বন্দুক হামলা বৃদ্ধির পেছনে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের উত্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অভিবাসী বিরোধী রাজনীতিকে দায়ী করেন।

লাস ভেগাসে এক বক্তৃতায় বুটিগিগ বলেন, “আমেরিকা আজ নিজেদের মাটিতে জন্ম নেওয়া শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের হামলায় শিকার।”এক টুইটে এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত কাণ্ড’ বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

“আমি জানি আমি এই দেশের ওইসব মানুষের কাতারে দাঁড়ানো যারা আজকের ঘৃণ্য কাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। কখনোই কোনোভাবে কোনো যুক্তিতে নিরপরাধ মানুষ হত্যা মেনে নেওয়া যায় না।”

হামলার আগের একটি সিসিটিভি ফুটেজে সন্দেহভাজন যুবককে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে ওয়ালমার্টের শোরুমে ঢুকতে দেখা যায়।

পুলিশ জানায়, হামলাকারী দোকানে ঢুকে ক্রেতাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে বেরিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে সেখানে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ঘিরে ধরলে সে আত্মসমর্পণ করে।

টেক্সাসে হামলার ১৩ ঘণ্টার মাথায় স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের অরেগনের ডেটনে একটি পানশালার বাইরে একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে এক বন্দুকধারীর গুলিতে নয়জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়। পরে ‍পুলিশ ওই বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করে।

এর মাত্র ছয়দিন আগে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি খাদ্য উৎসবে এক কিশোর বন্দুকধারীর হামলায় তিনজন নিহত এবং এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হন। পুলিশ ওই কিশোরকে ঘিরে ধরলে সে আত্মহত্যা করে।