এশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পক্ষে মার্কিন মন্ত্রী

তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে এশিয়ায় ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2019, 10:27 AM
Updated : 4 August 2019, 10:57 AM

তিন দশক আগে রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সরে আসার একদিন পর শনিবার তিনি নিজের এ মত ব্যক্ত করেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

তার এ বক্তব্য বিশ্বজুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাও বাড়িয়ে দেবে বলে শঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি সফরে সঙ্গী হওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসপার ইউরোপের চেয়ে এশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে তার পক্ষপাতের কথা তুলে ধরেন।

এশিয়ায় ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ, আমি চাই।”

কতদিনের মধ্যে সেগুলো বসতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের মুখে এসপার বলেন, “আমার পছন্দ ছিল কয়েক মাসের মধ্যে (ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন), কিন্তু এসব জিনিস আপনার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সময় নেয়।”

ইউরোপ থেকে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সরাতে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স (আইএনএফ) চুক্তি করেছিল।

মস্কো ধারাবাহিকভাবে চুক্তিটি লংঘন করে আসছে অভিযোগ তুলে ওয়াশিংটন শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ওই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।

ক্রেমলিন ওই চুক্তির শর্ত লংঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

শুক্রবার ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, নতুন করে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে।

আইএনএফ চুক্তি থেকে সরে আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে; নভেম্বরে পেন্টাগন পরীক্ষা চালাবে মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের।

উভয় পরীক্ষাতেই পারমাণবিক নয়, প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোই উৎক্ষেপণ করা হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

১৯৮৭ সালের ওই আইএনএফ চুক্তিতে ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তিটি বলবৎ থাকায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের তুলনায় ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের দিক দিয়ে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে বলে গত কয়েক বছর ধরেই মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে আসছিলেন।

চীনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষায় এতদিন নৌযান কিংবা বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের ওপরই নির্ভর করে আসছিল পেন্টাগন।

অন্যদিকে সমর বিশেষজ্ঞদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রই চীনা হুমকি মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর হবে বলে পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।

এসপার অবশ্য বলছেন, আইএনএফ চুক্তির মৃত্যু বিশ্বজুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াবে না।

“আমি কোনো অস্ত্র প্রতিযোগিতা দেখছি না। আমি দেখছি ইউরোপের পাশাপাশি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর মঞ্চে আমাদের সক্ষমতা বিকাশে সক্রিয়তার প্রয়োজনীয়তা,” বলেছেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র বসানো নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা না গেলেও গুয়ামের মতো স্থানগুলোতে পেন্টাগন খুব সহজেই গোপনে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারে।

এশিয়ার কোথায় কোথায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের চিন্তা করা হচ্ছে, সাংবাদিকদের তা না জানালেও এবারের এশিয়া সফরেই এসপার অঞ্চলটির প্রভাবশালী দেশগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়েই কথা বলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।