বোবা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত দুই সাংসদ পেল জাপান

প্রায় ২০ বছর আগে মস্তিষ্কের দূরারোগ্য স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হন জাপানের নাগরিক ইয়াসুহিকো ফুনাগো। এরপরই মূলত কথা বলা কিংবা নড়াচড়া কিছুই করতে পারেন না তিনি।

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2019, 02:18 PM
Updated : 1 August 2019, 02:18 PM

হুইল চেয়ারে বসে কিছুটা ইশারায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করা এই ইয়াসুহিকো ফুনাগো জাপানে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।

৬১ বছর বয়সী ফুনাগোর সঙ্গী হয়েছেন আরেক পক্ষাঘাতগ্রস্ত নারী ইকো কিমুরা। যিনি নিজের ডান হাত ছাড়া শরীরের কোন অঙ্গই নাড়াতে পারেন না।

গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো এ দুই প্রতিবন্ধী জাপানের উচ্চকক্ষের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে পার্লামেন্টে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ মিলল।

প্রায় এক কোটি প্রতিবন্ধীর কণ্ঠ তুলে ধরতে দেশটির বিরোধদলের টিকেটে সাংসদ হিসেবে ফুনাগো ও কিমুরা নির্বাচিত হওয়ার পর দেশটিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলে আসা প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ করে দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছিল অধিকারকর্মীরা। চলতি বছর মে মাসে জাপানে সম্রাট নারুহিতো সিংহাসন আরোহণের প্রথম দিনই প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় জোর দেন।

গত ২১ জুলাই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের জন্য ভোটের আয়োজন হলে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) বিপরীতে থাকা রেইওয়া শিনসেনগুমি এ দুই প্রতিবন্ধীকে তাদের সাংসদ আসনে নিয়ে আসেন।

সার্বক্ষণিক একজন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে থাকা এ শারীরিক প্রতিবন্ধী সাংসদরা বৃহস্পতিবার যখন পার্লামেন্টে প্রবেশ করছিলেন, তখন তাদের বসার জন্য সামনের চেয়ারগুলো খুলে সরিয়ে রাখতে দেখা যায়।

বিছানার মত বিশেষ চেয়ারে শুয়ে থাকা কিমুরা ও হুইল চেয়ারে লেপ্টে থাকা ফুনাগোকে কিছুটা বিচলিত দেখাচ্ছিল। পার্লামেন্টে পৌঁছার পর অন্য সাংসদরা তাদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়।

একবিংশ শতাব্দির শুরুতে ইয়াসুহিকো ফুনাগো অ্যামিয়োট্রপিক ল্যাটেরাল স্কেলোরোসিস (এএলএস) নামের স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত হন।

কম্পিউটার ব্যবহার করে চোখের সামনে দৃশ্যমান শব্দ ইশারায় সংযোজন করে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আশা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই, কাজ করতে চাই।”

আর কিমুরা জন্মের ৮ মাসের মাথায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। এরপর থেকে শিশু সদনে বেড়ে ওঠা কিমুরা ১৯ বছর পর ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারে নিজে নিজে চলাফেরা শুরু করেন। প্রতিবন্ধীদের সাহায্যে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে কাজও করে আসছিলেন।

বৃহস্পতিবার সংসদ থেকে বের হয়ে কিমুরা সাংবাদিকদের বলেন, “এটি কেবল শুরু। আমার মতো একজন মারাত্বক পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ যখন সংসদে আসতে পেরেছে তখন প্রতিবন্ধীদের অনেক সমস্যাই  তুলে ধরার চেষ্টা করব।”

তিনি আরো বলেন, এখানে আমি আমার কেয়ারটেকার ছাড়া কিছুই করতে পারব না। তবে কৃতজ্ঞ যে সরকারের নেতৃত্বের খুব কাছাকাছি আমরা আসতে পেরেছি।

জাপানের পার্লামেন্টে এর আগে প্রতিবন্ধী সাংসদ এলেও তাদের শারিরীক সমস্যাগুলো কেউ বুঝতে পারত না। কিন্তু ফুনাগো ও কিমুরা বলতে গেলে প্রথম শারীরিকভাবে অক্ষম সাংসদ হিসেবে পার্লামেন্টে যোগ দিলেন।