বিবিসি জানায়, হেবেই প্রদেশের উ’আন আদালত বুধবার এতিমখানার মালিক লিকে এই সাজা দেয়। তাকে তিন লাখ ৮৮ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানাও করা হয়েছে।
আদালত এ মামলায় লির ছেলেবন্ধুসহ আরো ১৫জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে।
আদালতের রায়ে বলা হয়, লি তার ‘এতিমখানাকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করেছেন’।
“লি ও তার দলবল অন্যান্য অপরাধের মত বিশাল অংকের অর্থকড়ি হাতাতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।”
লির ছেলেবন্ধু জিউ কিকে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা এবং মারধরের অভিযোগে ১২ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ১২ লাখ ইউয়ান জরিমানা করা হয়েছে।
বাকিদের সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে।
লির ‘লাভ মাদার’ হয়ে ওঠা:
নিজের শহর উ’আনে ২০০৬ সালে কয়েক ডজন শিশুকে দত্তক নিয়ে প্রথম সংবাদমাধ্যমে খবর হন লি।
তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার সাবেক স্বামী মাত্র সাত হাজার ইউয়ানে তাদের ছেলেকে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। পরে অনেক কষ্টে তিনি নিজের ছেলেকে উদ্ধার করেন। তারপর থেকে তিনি অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর এবং সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন।
বিবিসি জানায়, কয়েক বছরের মধ্যে লি বিপুল ধন-সম্পত্তির মালিক হয়ে যান। এমনকি তিনি পুরো হেবেই প্রদেশে ধনী নারীদের একজনে পরিণত হন। এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে তিনি একটি লোহার খনিতে বিনিয়োগ করেছিলেন এবং পরে তিনি ওই খনি কিনে নেন।
“আমি প্রায়ই দেখতাম পাঁচ থেকে ছয় বছরের একটি মেয়ে শিশু খনির চারপাশে খেলে বেড়াত। তারা বাবা মারা গেছে এবং মা অন্য কোথাও চলে গেছে। আমি শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার দত্তক নেওয়া প্রথম শিশু ছিল সে।”
তারপর তিনি আরো বেশ কয়েটি শিশুকে দত্তক নেন এবং একটি এতিমখানা খোলেন; যেটির নাম দেন ‘লাভ ভিলেজ’।
২০১৭ সালে তার এতিমখানায় সর্বোচ্চ ১১৮ জন শিশু ছিল বলে জানায় বিবিসি।
ওই বছরই স্থানীয় কয়েকজন লি ও তার এতিমখানার সন্দেহজনক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করে।
২০১৮ সালের মে মাসে পুলিশ লির ব্যাংক একাউন্টে দুই কোটি ইউয়ান এবং ২০ হাজার মার্কিন ডলার খুঁজে পায়। তার কাছে ল্যান্ড রোভার ও মার্সিডিজ বেঞ্জের মত কয়েক দামি দামি গাড়িও ছিল। ওই বছরই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
তখন পুলিশ জানায়, ২০১১ সাল থেকে লি বিভিন্ন অবৈধ কাজ করা শুরু করেন।
তিনি তার এতিমখানার শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন নির্মাণ ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে চাঁদাবাজি করতেন।
দেখা যেত নির্মাণক্ষেত্রে শিশুরা ছুটে ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে যেত এবং অর্থ না দেওয়া পর্যন্ত নড়তো না। এভাবে তারা নির্মাণ কোম্পানিকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতো।
লিকে গ্রেপ্তারের পর তার এতিমখানা থেকে ৭৪টি শিশুকে বিভিন্ন সরকারি শিশুসদন ও স্কুলে পাঠানো হয়েছে।
লি’র এ কাণ্ড প্রকাশের পর চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবোতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই তাকে ‘ভেড়ার ভিড়ে লুকিয়ে থাকা হায়না’ বলেছে।
উইবোতে একজন লেখেন, “ন্যক্কারজনক, আমার চাচা তার এতিমখানায় অর্থ দান করেছিল।”
অন্যএকজন লেখেন, “আমি একসময় তাকে লাভ মাদার বলে ডাকতাম। আমি সেটা ফেরত নিতে চাই…তার মধ্যে আসলে কোনো ভালোবাসা নেই। তিনি এই নাম ব্যবহার করে শুধু ধনী হতে চেয়েছিলেন।”