প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন বরিস জনসন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি

যুক্তরাজ্য আগামী ৩১ অক্টোবরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করবে। “যদি বা কিন্তুর’ কোনো অবকাশ নেই, আমিই এই দায়িত্ব নিলাম”, ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে নিজের উদ্বোধনী বক্তৃতায় এভাবেই নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকার কথা বলেন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2019, 04:24 PM
Updated : 24 July 2019, 07:10 PM

বিবিসি জানায়, বুধবার বিকালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। তারপরই রানির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন জনসন।

বাকিংহাম প্যালেস থেকে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে বক্তৃতা দিতে আসেন। বলেন, “অবিশ্বাসী, আশঙ্কাকারী ও হতাশাবাদী, যারা বলেছে এটা করা সম্ভব না তারা ভুল।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের জন্য মাত্র তিন মাস সময় পাচ্ছেন জনসন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটাই তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাধনমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন দ্রুত নিজের মন্ত্রিসভা গুছিয়ে নেওয়ার কাজে হাত দেবেন জনসন। এরই মধ্যে মে’র মন্ত্রিসভার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, মতের মিল হবে না বিধায় তারা জনসনের অধীনে কাজ করতে পারবেন না।

ব্রেক্সিট প্রশ্নে গত তিন বছর ধরে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি থমকে আছে। ২০১৬ সালের ঐতিহাসিক গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসার পর বিপক্ষে প্রচার চালানো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেডিভ ক্যামেরন পদত্যাগ করেন।

ক্যামেরনের পদত্যাগের পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দলীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হন টেরিজা মে। তার সামনেও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশবাসীকে একটি স্বার্থরক্ষাকারী ঠিকঠাক ব্রেক্সিট উপহার দেওয়া।

যথা সময়ে ব্রেক্সিট ঘণ্টা বাজালেও ঠিক কী প্রক্রিয়ায় ইইউর সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ হবে তার পথরেখা তিনি নির্ধারিত দুই বছরের মধ্যে ঠিক করতে পারেনি।

এই দুই বছরে তিনি নানা ভাবে বুঝিয়ে, ছাড় দিয়ে একটি ব্রেক্সিট চুক্তিতে উপনীত হতে চয়েছেন। কিন্তু তার দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরাই তাকে সমর্থন করেনি। বরং পার্লামেন্টে তিনবার চেষ্টা করেও তিনি নিজের খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে বর্থ হন।

ওই ব্যর্থতার সব দায় কাঁধে নিয়ে গত জুনে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মে। এরপর নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত  তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

বুধবার জনসন দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে মে বিদায় নেওয়ার সময় চোখের পানি যেন আর ধরে রাখতে পারছিলেন না। পার্লামেন্ট সদস্যদের সামনে তিনি খুবই আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। হাউস অব কমন্স থেকে মে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সবাই দাঁড়িয়ে এবং করতালি দিয়ে তাকে সংবর্ধনা দিয়েছে।

মে’র উত্তরসূরি বরিস জনসন শুরু থেকেই ব্রেক্সিটের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া এবং গণভোটের আগে ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচার চালানো ব্রিটিশ নেতাদের অন্যতম ছিলেন। নিজের সেই অবস্থান থেকে এক চুলও না সরে যাওয়া জনসনের কাঁধেই এখন সম্পর্কোচ্ছেদের দায়ভার এসে পড়েছে।

তিনি বলেন, “যারা যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তারা তাদের সবকিছু হারাতে যাচ্ছে। কারণ, আমরা আবারও আমাদের গণতন্ত্রের উপর আস্থা রাখতে যাচ্ছি।

“কাজ করার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং এই দেশকে আরো উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে।” ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা করা নয় বরং এখন ব্রেক্সিটের সুবিধা পাওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় বলে মন্তব্য করেন জনসন।

তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, হাতে থাকা ৯৯ দিনের মধ্যেই তিনি একটি ব্রেক্সিট চুক্তিতে উপনীত হতে পারবেন। তবে তিনি একই সঙ্গে বলেন, যদি সেটা না হয় তবে তিনি কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি গ্রহণের কাজও করবেন।