অক্টোবরেই ব্রেক্সিট: বরিস জনসন

নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েই নির্ধারিত সময় ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) কাজ শেষ করার অঙ্গীকার করেছেন বরিস জনসন।

>>রয়টার্স
Published : 23 July 2019, 02:49 PM
Updated : 23 July 2019, 02:49 PM

প্রতিদ্বন্দ্বী জেরেমি হান্টকে ৪৫ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত হন লন্ডনের সাবেক মেয়র জনসন। নিয়মানুযায়ী, তিনিই দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।

বিজয়ী ভাষণে জনসন ‘যথা সময়ে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করা, দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনকে হারানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি লন্ডনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করে বলেন, “আমরা দেশকে শক্তিশালী করতে চলেছি।”

“আমরা আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব। আমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখব। অনেকটা সেই ঘুমন্ত দৈত্যের মত আমরা জেগে উঠব আর নিজেদের উপর সন্দেহ ও নেতিবাচক মনভাব থাকা ব্যক্তিদের হুংকার দেব।”

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’কে ধন্যবাদ জানিয়ে জনসন বলেন, মে’র মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারা তার জন্য ‘দারুণ সম্মানের’ ছিল।

ব্রেক্সিটের পথরেখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মে’র সঙ্গে সুস্পষ্ট বিরোধের জেরে গত বছর জুলাইয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন জনসন।

তারপর গত এক বছরে মে নানা ভাবে বিভিন্ন ছাড় দিয়ে তিন দফায় তার খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনবারই চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এবং দল নতুন নেতা বেছে নেওয়া পর্যন্ত প্রধামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার কথা জানান।

মে বুধবার বিকালে রানির সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এর পরপরই তার উত্তরসূরি জনসন বাকিংহাম প্যালেস ঘুরে এসে অসীন হবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে।

প্রধানমন্ত্রী জনসনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ব্রেক্সিটের জটিল অংকের হিসাব মেলানো। জনসন অবশ্য হিসাব মিলাতে না পারলে বিকল্প পথ খোলা রেখেছেন। তিনি আগেই বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কোচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এজন্য একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারলে ভাল, নতুবা কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হবে।

২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির চার দশকের সম্পর্কোচ্ছেদের রায় হয়। ভোটে হারের পর রক্ষণশীল দলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে টেরিজা মে সেই দায়িত্ব নিয়ে ব্রেক্সিটের পথরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এ জোট থেকে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আলাদা হবে এবং এরপর ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, সেই পথ বের করার জন্য ২১ মাস সময় পেয়েছিলেন মে। কিন্তু সেজন্য যে পরিকল্পনা তিনি সাজিয়েছিলেন তা পার্লামেন্টে পাস করাতে না পারায় ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়িয়ে সর্বশেষ নতুন তারিখ ঠিক হয় ৩১ অক্টোবর।

কিন্তু নিজ দলে বিদ্রোহের মুখে গত ৭ জুন নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন টেরিজা মে, যদিও তার সরকারের মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত।

ওই মেয়াদের বাকি সময়ের জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বরিস জনসনকে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে বিচ্ছেদের হিসাব চূড়ান্ত করতে হবে। তাতে তিনি ব্যর্থ হলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার নতুন চক্করে পড়তে হবে যুক্তরাজ্যকে।