হরমুজ প্রণালীতে ব্রিটিশ ট্যাংকার জব্দ করল ইরান

জিব্রাল্টারে ইরানি ট্যাংকার জব্দের পাল্টায় দুই সপ্তাহ পর তেহরান হরমুজ প্রণালী থেকে একটি ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2019, 04:50 AM
Updated : 20 July 2019, 05:53 AM

শুক্রবার ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী ওই ট্যাংকারটি জব্দ করে বলে জানিয়েছে বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

স্টেনা ইমপেরিও নামের ওই ট্যাংকারটি আটকের ৪০ মিনিট পর ইরানের সেনাবাহিনী যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় আরেকটি ট্যাংকারকেও আটক করেছিল। যদিও পরে মেসদার নামে ওই নৌযানটিকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ট্যাংকার আটকের ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। নৌযানটি শিগগিরই ছেড়ে না দিলে পাল্টা ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে বলে ইরানকে সতর্কও করেছে তারা। 

রয়টার্স জানায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালের দিকে হরমুজ প্রণালী দিয়ে পারস্য উপসাগরে প্রবেশের কিছু সময় পর ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর নৌযান ও হেলিকপ্টার স্টেনা ইমপেরিওকে গতিপথ বদলাতে বাধ্য করে।

এর কিছুক্ষণ পর মেসদারকেও আটক করার খবর পাওয়া যায়।

ইরানের আধাসরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম পরে জানায়, তেহরান তেলবাহী ট্যাংকার মেসদারকে আটক করেনি। নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়ে সতর্ক করে সেটিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

নৌযানটি পরে নির্দিষ্ট যাত্রাপথে ফিরেছে এবং এর ক্রুরা ‘ভালো ও নিরাপদ’ আছেন বলে জানিয়েছে মেসদারের ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান নরবাক।

‘সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন অনুসরণ না করায়’ ইরানি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে স্টেনা ইমপেরিওকে আটক করা হয় বলে দেশটির বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।  

“যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী তেলের ট্যাংকার স্টেনা ইমপেরিও সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন পাওয়ার পর আরও অনুসন্ধানের লক্ষ্যে আমরা সেনাবাহিনীকে ওই ট্যাংকারটিকে বন্দর আব্বাসের দিকে নিয়ে যেতে অনুরোধ করি,” বলেছেন হরমুজগান মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের প্রধান আল্লামুরাদ আফিফিপুর।

ইরানি কর্তৃপক্ষ স্টেনা ইমপেরিওর বিরুদ্ধে জিপিএস বন্ধ রাখা, হরমুজের প্রবেশপথ দিয়ে না গিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ ব্যবহার করা ও ধারাবাহিক সতর্কতা অবজ্ঞা করার অভিযোগ করছে বলে জানিয়েছে তাসনিম।

ব্রিটিশ এ নৌযানটি তেলের অবশেষ ডাম্পিং করে দূষণ সৃষ্টি করছিল বলেও ভাষ্য তেহরানের।

স্টেনা ইমপেরিওর স্বত্তাধিকারী প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন মেরিন ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, তাদের নৌযানটি সৌদি আরবের জুবেল বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।

এর ২৩ ক্রুর নিরাপত্তার বিষয়টির ওপরই সবচেয়ে বেশ জোর দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।

“এই আটক অগ্রহণযোগ্য। সমুদ্রে চলাচলের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখা এবং ওই অঞ্চলে যেন সব নৌযান নিরাপদে ও অবাধে চলতে পারে তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি,” বলেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেরমি হান্ট।

ইরান ট্যাংকারটিকে শিগগিরই ছেড়ে না দিলে পাল্টা ব্যবস্থারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

সামরিক নয়, পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক পদক্ষেপেই বেশি জোর দিচ্ছে বলেও ভাষ্য হান্টের।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয় নিয়ে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার ইউএসএস বক্সার হরমুজে একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে বলে তিনি দাবিও করেছিলেন। যদিও ইরান তা অস্বীকার করেছে।

চলতি মাসের শুরুতে জিব্রাল্টারে ইরানি তেলের ট্যাংকার গ্রেস ১ আটকের পর থেকেই তেহরান ও লন্ডনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে।

সিরিয়ার বানিয়াস শোধনাগারে জ্বালানি নিয়ে যাচ্ছে এমন সন্দেহে ব্রিটিশ মেরিন সেনাদের সহায়তায় জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষ ওই সুপার ট্যাংকারটিকে আটক করেছিল।

ওই শোধনাগারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আছে।

এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায় ইরান। ট্যাংকারটি ছেড়ে না দিলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি ছিল তাদের।

গ্রেস ১ আটকের কয়েকদিন পর হরমুজে একটি ব্রিটিশ জাহাজকে ইরানের কয়েকটি নৌযান হেনস্তা করে বলেও লন্ডন অভিযোগ করেছিল।