স্টুডিওতে আগুন: শোকে স্তব্ধ জাপানের অ্যানিমেশন প্রেমীরা

অ্যানিমেশন বলতে যে জাতি পাগল, সেই জাপানের অ্যানিমেশন স্টুডিতে নাশকতার আগুনের ঘটনায় দুই ডজনের বেশি মানুষের মৃত্যুতে স্তব্ধ জাপানবাসী।

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 12:59 PM
Updated : 18 July 2019, 02:16 PM

বৃহস্পতিবার সকালে জাপানের কিয়োটো অ্যানিমেশন (কিয়োআনি) স্টুডিওতে এ নারকীয় ঘটনায় ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়েছেন অ্যানিমেশন প্রেমীরা। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অ্যানিমেশন প্রেমীরা শোক প্রকাশ করছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এক ব্যক্তি কিয়োটো অ্যানিমেশন কোম্পানির স্টুডিও ভেঙে প্রবেশ করে চারদিকে অজ্ঞাত তরল ছিটিয়ে দেয়। ওই সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। আটকের পর শরীরে জখম থাকার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৩ জন নিহত এবং আরো ৩৬ জন আহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজো শোক প্রকাশ করে এক টুইট বার্তায় বলেছেন, “এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি বাকরুদ্ধ।”  যারা আহত হয়েছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনাও করেন তিনি।

ওদিকে, কিয়েতো অ্যানিমেশন স্টুডিওর জন্য সহায়তা তহবিল গঠন করেছে গো-ফান্ড মি ডটকম। তিন ঘণ্টায় ১ লাখ ৯২ হাজার মার্কিন ডলার তুলেছে তারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে শোকের মাতম। সানজি ইয়োনাকা নামের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর কথায়, “অ্যানিমেশন ছাড়া আমি এক বিন্দুও নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। কিয়োআনির ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।”

তিনি আরো বলেন, “আমি জানি না এ মুহূর্তে কি বলা উচিত, তবে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার হোক।”

সুগিয়ারা ইত্তোকো নামের এক অ্যানিমেশন প্রেমী বলেন, “আমি ঘটনাটি শোনার পর হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি। গতকালই তাদের সাউন্ড, ইউফোনিয়াম সিনেমাটি দেখেছিলাম। জাপানের যে কয়েকটি অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের মধ্যে কিয়োআনি আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল।”

“আগুনের ঘটনা মর্মান্তিক। আমি জানি না, এ শোক কাটিয়ে কবে প্রতিষ্ঠানটি আবার অ্যানিমেশন আনবে।”

ওদিকে, টুইটারে একজন বলেন, “কিয়োআনির ঘটনায় আমি শোকার্ত। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি মানুষ আমার প্রিয় সিনেমাগুলো উপহার দিয়েছে। আমি শুনেছি এদের মধ্যে কেউ কেউ আর নেই। এটা খুবই কষ্টের।”

কাতারুপা নামের একজন লেখেন, “কিয়োআনি বেশ কিছু অসাধারণ কাজ করেছে যেগুলো আমি অন্য কোথাও পায়নি। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমি তাদেরকে আর পাব না। এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।”

গিলেন আকিও নামের আরেকজনের উক্তি, “আমার হৃদয় বিক্ষত হয়েছে। জীবনের গল্প পরিবর্তন করে দেওয়া অনেক কিছু সৃষ্টি করেছে এ স্টুডিও। আমি আশা করছি, অসুস্থরা দ্রুত সেরে উঠবেন।”

১৯৮১ সালে ইয়োকো হাত্তা নামের এক নারী নিজেকে স্বাবলম্বী করতে তার স্বামী হিডেকী হাত্তাকে সঙ্গে নিয়ে কিয়োতো অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠা করেন।

ভিডিও অ্যানিমেশন, সিনেমা, টিভি সিরিজের জন্য বিখ্যাত এ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম পুরো জাপান জুড়ে। ফ্রি, রোড টু দ্যা ওয়ার্ল্ড ড্রিম নামের একটি অ্যানিমেশন মুভি চলতি মাসের গোড়ার দিকে মুক্তি পেয়েছিল।

জাপানে এই অ্যানিমেশন থেকে প্রতি বছর প্রায় ২ ট্রিলিয়ন জাপানি মুদ্রা (ইয়েন) আয় হয়। দেশটির অ্যানিমেশন অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ আয় গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।