মিয়ানমারে সেনা-প্রণীত সংবিধান সংশোধন নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ

মিয়ানমারে সেনা-প্রণীত সংবিধান সংশোধন করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা হ্রাসে নেত্রী অং সান সুচির দলের উদ্যোগের পক্ষে এবং বিপক্ষে রাস্তায় পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ হয়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 17 July 2019, 04:49 PM
Updated : 17 July 2019, 04:49 PM

ইয়াঙ্গনে বুধবার সকালে সংবিধান সংশোধনের দাবিতে বিক্ষোভ হওয়ার পর একইদিন বিকালে এ নগরীতেই পাল্টা বিক্ষোভ করে সংবিধান সংশোধনের বিরোধীরা।

অং সান সু চি’র ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সংবিধানের এ সংশোধন চাইছে। যদিও পার্লামেন্টের সেনা সদস্যরা এর বিরোধিতা করে এ প্রস্তাবে ‘ভিটো’  দিয়েছে।

বুধবার সকালে শত শত বিক্ষোভকারী মাথায় লাল রঙের কাপড় বেঁধে সেন্ট্রাল সুলে প্যাগোডায় জড়ো হয়। তাদের মাথায় বাঁধা কাপড়ে ‘২০০৮ সালের সংবিধান সংশোধন’ কথাটি লেখা ছিল।

নির্দলীয় ওই বিক্ষোভের আয়োজক পায়ে ফিও জাউ বলেন, “বর্তমান সরকার সামনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ২০০৮ সালের সংবিধানের কারণে তারা সেটা পারছে না।”

তিনি নির্বাচিত নেতাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভ থেকে দূরে রাখার আহ্বানও জানান। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, “আমরা এমন দেশ চাই যেটি জনগণ পরিচালনা করবে।”

প্রায় অর্ধ শতাব্দীর সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১৬ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সু চি’র দল এনএলডি। কিন্তু জান্তা আমলে তৈরি সংবিধানের কারণে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে বাধ্য হয়।

মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ এবং সেনাপ্রধান সেনাবাহিনী থেকে ওই আসনগুলোর সদস্য মনোনীত করবেন। এছাড়া, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মিয়ানমারের সংবিধানের কারণেই দলের প্রধান হয়েও সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।

বুধবার সকাল এবং বিকালে ঠিক একই জায়গায় শত শত মানুষ জড় হয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেছে। সংবিধান সংশোধনের বিরোধীরা ‘যারা নিজেদের জাতি ও ধর্মকে ভালোবাসে তারা সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে অবস্থান নেবে’ বলে স্লোগান দেয়।

বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে জাতিয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সু চি’র সমালোচনা করেন এবং সেনাবাহিনীকে তাদের রক্ষক মনে করেন। সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের অনেকেই অর্থের বিনিময়ে সমাবেশে যোগ দেন এবং ঠিক জানেন না তারা আসলে কাকে বা কী সমর্থন করছেন।

সমাবেশে অংশ নেওয়া কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এমন খবরই দিয়েছে।

এক বিক্ষোভকারী বলেন, “যদি ভিন্ন ধর্মের কেউ প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন তবে কোনো গুলি ছোড়া ছাড়াই আমাদের জাতি এবং ধর্ম শেষ হয়ে যাবে।”

গত সোমবার মিয়ানমারের পার্লামেন্টে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল থেকে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় বলে জানা গেছে। যদিও বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে।

তবে ইয়াঙ্গনের আঞ্চলিক পার্লামেন্টের সদস্য এনএলডি নেতা নাই ফোনে লাত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তার দলের মূল প্রস্তাবগুলোর একটি ছিল পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর আসন কোটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে একটি সময় বেঁধে দেওয়া। যেটা ২০২১ সাল নাগাদ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার মধ্য দিয়ে শুরু হবে।

সু চির দল এনএলডি পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সেনাবাহিনীর নির্ধারিত আসনের কারণে সংবিধান সংশোধনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় ৭৫ শতাংশ ভোট পাওয়া সম্ভব নয়। নাই ফোনে লাত বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনী থেকে আসা সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন। তাই এটি সেনাবাহিনীর রায়ের উপর নির্ভর করছে।

“তবে আমরা আশা করছি সেনাবাহিনী এটি মেনে নেবে এবং ধীরে ধীরে তাদের আসন কোটা হ্রাস পাবে।”