দত্তক ভারতীয় কন্যার মৃত্যুতে মার্কিন বাবার যাবজ্জীবন

দত্তক নেওয়া তিন বছর বয়সী কন্যা শেরিন ম্যাথুজকে হত্যার অভিযোগে আটক এক মার্কিনিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2019, 10:08 AM
Updated : 27 June 2019, 10:08 AM

পালক বাবা ওয়েসলি ম্যাথুজ ‘ভুলবশত বাচ্চাকে আঘাত’ করার দায় স্বীকার করে নেওয়ার পর বিচারকরা সর্বসম্মত হয়ে এ রায় দেন, জানিয়েছে বিবিসি।

২০১১ সালের অক্টোবরে টেক্সাসের বাড়ি থেকে শেরিন ‘নিখোঁজ’ হলে তার সন্ধানে ব্যাপক উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

দুধ না খাওয়ার শাস্তি হিসেবে দত্তক মেয়েকে ঘরের বাইরে বের করে দেওয়ার কিছু সময় পর থেকেই তার খোঁজ নেই, সে সময় এমনটাই বলেছিলেন ওয়েসলি।

দুই সপ্তাহ পর এক নালার প্রবেশমুখে শেরিনের মৃতদেহ মিললে বদলে যায় পালক বাবার ভাষ্য।

‘বিষম খেয়ে’ তিন বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু হয় বলে নতুন ভাষ্যে দাবি করেন ওয়েসলি।

জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও ওয়েসলি ঘটনা নিয়ে বারবার তার ভাষ্য বদলেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ওয়েসলি দাবি করেন, দুর্ঘটনাবশত শ্বাসনালীতে দুধ আটকে শেরিনের মৃত্যু হয়েছে।

“ওই দলা বের করে আনতে আমি আস্তে আস্তে শেরিনকে ঝাঁকুনি দেওয়ার চেষ্টা করি, যদিও কোনো কিছুই কাজ করেনি; এক পর্যায়ে তার মাথা ঘুরতে থাকে এবং একসময় স্থির হয়ে যায়,’ শুনানিতে ওয়েলস এমনটাই বলেছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তার এ ভাষ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কৌঁসুলি শেরি থমাস বলেছেন, চিকিৎসকের প্রতিবেদন দেখাচ্ছে- দাঁড়িয়ে থাকা তিন বছর বয়সী একটি মেয়ের শ্বাসনালীতে দুধ আটকে যাওয়ার বিষয়টি ‘অসম্ভব’।

“এর অর্থ হচ্ছে ওয়েসলিই ওই ছোট মেয়েটিকে হত্যা করেছেন। হত্যার পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তার অপরাধ লুকিয়েছিলেন, পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন,” স্থানীয় গণমাধ্যমকে এমনটাই বলেন এ নারী কৌঁসুলি।

আসামী পক্ষের আইনজীবী এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, তার মক্কেল বাবা হিসেবে ভালো।

“শেরিন বিষম খাওয়ার পর ওয়েসলি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে সাহায্য চাইতেও ভুলে যান,” বলেন তিনি।

মক্কেলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে ‘নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক সাজা’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন এ আইনজীবী।

ওয়েসলির স্ত্রী সিনি ম্যাথুজের বিরুদ্ধেও দত্তক নেওয়া সন্তানকে পরিত্যাগ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল; প্রমাণ না পাওয়ায় চলতি বছরের শুরুর দিকে তাকে ওই অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

দত্তক সন্তান শেরিন নিখোঁজের পরপরই ওয়েসলি-সিনি দম্পতির একমাত্র মেয়েটিকেও বাবা-মার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

প্রথম দিকে ফস্টার কেয়ারে রাখা হলেও এখন তাকে আত্মীয়স্বজনের কাছে রাখা হয়েছে।

২০১৬ সালে ওয়েসলি ভারতের হোল্ট ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে শেরিনকে দত্তক নিয়েছিলেন।

দত্তক দেওয়ার সময় পালক বাবা-মার সবকিছু ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি এ অভিযোগে শেরিনের মৃত্যুর ঘটনার পর ভারতের সরকার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।

দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি পরে দত্তক নেওয়ার নিয়মেও কড়াকড়ি আনে।