উত্তর কোরিয়ায় ‘আটক’ অস্ট্রেলীয় শিক্ষার্থীকে নিয়ে শঙ্কা

উত্তর কোরিয়ায় এক অস্ট্রেলীয় শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে পিয়ংইয়ংয়ের কাছ থেকে ‘জরুরি ভিত্তিতে সুনিশ্চিত তথ্য’ চেয়েছে সিডনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2019, 07:41 AM
Updated : 27 June 2019, 08:04 AM

কিম ইল সুং বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করতে যাওয়া অ্যালেক সিগলি এক বছর ধরে পিয়ংইয়ংয়ে বসবাস করছিলেন।

২৯ বছর বয়সী এ যুবকের সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবের যোগাযোগ নেই, সিগলির পরিবারের বিবৃতির বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।

“অ্যালেক ডিপিআরকেতে (উত্তর কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক নাম) আটক কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মঙ্গলবার অস্ট্রেলীয় সময় সকাল থেকে তার সঙ্গে পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবদের কোনো যোগাযোগ হয়নি, যা তার দিক থেকে খুবই অস্বাভাবিক,” বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা সিগলির অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

কোরীয় ভাষায় দক্ষ সিগলিকে কেন আটক করা হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বন্ধুরা তার নিখোঁজের খবর দেয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (এবিসি)।

পরিস্থিতিকে ‘খুবই গুরুতর’ অ্যাখ্যা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের’ সঙ্গে কথা বলেছেন বলে অস্ট্রেলিয়ার এক মন্ত্রী জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার পার্থের বাসিন্দা সিগলি স্নাতকোত্তর পড়াশোনার পাশাপাশি পশ্চিমা পর্যটকদের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবসাও করছিলেন।

২০১২ সালে সিগলি প্রথম উত্তর কোরিয়ায় যান বলে তার পরিবার জানিয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সিগলি নিজেকে ‘উত্তর কোরিয়ায় থাকা একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

চীনে পড়াশোনা করতে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটিতে থাকার ব্যাপারে তার আগ্রহ সৃষ্টি হয় বলেও জানান এ যুবক।

“শিক্ষার্থী ভিসায় দীর্ঘদিন থাকায় পিয়ংইয়ংয়ের প্রায় সর্বত্র অভূতপূর্ব প্রবেশাধিকার আছে আমার; কাউকে সঙ্গে না নিয়েই আমি অবাধে শহরটিতে বিচরণ করতে পারি,” নিবন্ধে এমনটাই লিখেছিলেন এ অস্ট্রেলীয়।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়ার পরও উত্তর কোরিয়ায় বসবাসের ক্ষেত্রে ‘কখনোই হুমকি অনুভূত’ হয়নি বলেও সিগলি গত বছর স্কাই নিউজকে বলেছিলেন।

উত্তর কোরিয়ায় এর আগেও বিদেশি নাগরিকদের আটক করার ঘটনা ঘটেছে।

দেশটিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা কিংবা পিয়ংইয়ংয়ের ভাষায় ‘রাষ্ট্রবিরোধী বিপজ্জনক অপরাধের’ কারণে এসব আটক হয়েছিল।

পর্যটন এলাকায় খ্রিস্টধর্মের প্রচারপত্র ফেলে যাওয়ার অপরাধে ২০১৪ সালে অস্ট্রেলীয় নাগরিক জন স্টুয়ার্টকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল উত্তর কোরিয়া।

দেশটিতে ধর্মীয় কার্যক্রমে কঠোর বিধিনিষেধ আছে, যে কারণে অনেকবারই ধর্মপ্রচারকদের আটক হতে হয়েছে।

ভ্রমণের সময় প্রচার নিদর্শন চুরির অভিযোগে ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়া মার্কিন ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ারকে কারাদণ্ড দিয়েছিল।

১৭ মাস আটক থাকার পর ওয়ার্মবিয়ার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেও কয়েকদিন পর অচেতন অবস্থায় মারা যান।

ওয়ার্মবিয়ারের বাবা-মার দাবি, উত্তর কোরিয়ায় গ্রেপ্তারের পর হওয়া বর্বর নির্যাতনের কারণেই তাদের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

উত্তর কোরিয়া ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

একদলশাসিত রাষ্ট্রটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘেরও সমালোচনা আছে। দেশটির নাগরিকরা ‘পদ্ধতিগত, বিস্তৃত ও ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘনের’ মধ্যে বসবাস করছে বলেও অভিযোগ আন্তর্জাতিক এ অভিভাবক সংস্থাটির।

পশ্চিমা অনেক দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ারও উত্তর কোরিয়ার কোনো দূতাবাস নেই। সুইডেনের দূতাবাসের মাধ্যমে তারা কাজ চালায়।