বিতর্কিত বিলের ইতি টানার ইঙ্গিত হংকং নেতার

হংকংয়ে বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতা ক্যারি লাম। বিলটি এখন আর পাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2019, 02:12 PM
Updated : 18 June 2019, 03:55 PM

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে লাম দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চেয়ে বিলের পরিসমাপ্তি ঘটানোর ওই ইঙ্গিত দেন।

যদিও বিলটি ‘প্রত্যাহার’ করার কথা বলেননি ক্যারি লাম। তবে তিনি বলেছেন, জনমনে আতঙ্ক না কাটলে তার মেয়াদে এ বিল আর উত্থাপন করা হবে না।

গত সপ্তাহে ওই বিলের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই হংকংয়ে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে।

প্রস্তাবিত ওই বিলে হংকংয়ের আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত সেখানকার যে কোনো বাসিন্দাকে তাইওয়ান,ম্যাকাউ কিংবা চীনের মূলভূখণ্ডে বিচারের জন্য পাঠানোর সুযোগ রাখা হয়।

বেইজিংপন্থি হংকং সরকারের যুক্তি ছিল, প্রত্যর্পণের সুযোগ না থাকায় হংকং চীনের অন্যান্য অংশের অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে, সমালোচকদের আশঙ্কা, ওই আইন ব্যবহার করে চীন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিবিদদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারবে। সেইসঙ্গে হংকংয়ের বেইজিংবিরোধী হিসেবে পরিচিতরা কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন চীনের বিচার ব্যবস্থার জালে আটকা পড়ে যাবেন।

বিলের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ শুরু করলে ক্যারি লাম শুরুতে বিলটি স্থগিত করেন। কিন্তু তাতে বিক্ষোভকারীদের মন গলেনি। তারা বিলটি পুরোপুরি বাতিল করা এবং ক্যারি লামের পদত্যাগ দাবি করেন।

গণবিক্ষোভের মুখে গত রোববার হংকং সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্যারি লাম বিতর্কিত বিলের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।

এরপর মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ক্যারি লাম বলেছেন, “ব্যক্তিগতভাবে এর বেশিরভাগ দায় আমার। ওই বিলের কারণে বিতর্ক, মতবিরোধ এবং সমাজে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে “

“যে কারণে আমি হংকংয়ের সব মানুষের কাছে অন্তর থেকে ক্ষমা চাইছি।”

তিনি বলেন, “যেহেতু এ বিলের কারণে গত কয়েক মাসে সমাজে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং মতভেদ দেখা দিয়েছে। তাই আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এ আতঙ্ক এবং উদ্বেগ সহনশীল পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমি বিলটি নিয়ে পুনরায় আইনি কার্যক্রম শুরু করব না।”

সম্মেলনে লামের পদত্যাগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “আগামী তিন বছরে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা বাকি আছে।”

“যদিও এ ঘটনার পর আগামী তিন বছর কাজ করা বেশ কঠিন হবে বলেই আমার মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি এবং আমার দল জনগণের আস্থা ফিরে পেতে কঠিন পরিশ্রম করব।”

হংকংয়ে একজন প্রধান নির্বাহীর মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে ক্যারি লাম যত প্রতিশ্রুতিই দেন না কেন বিক্ষোভের আয়োজনকারী এবং বিরোধী দলগুলো তাকে আর বিশ্বাস করতে চাইছে না।

তারা বলেন, “ক্যারি লাম ক্রামগত মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি ওই শয়তানি আইন প্রত্যাহারের কঠোর আন্দোলনে হংকংয়ের জনগণ আমাদের সঙ্গে একজোট হয়ে থাকবে।”

আরো বেশি চীনা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আশঙ্কায় হংকংয়ের অনেকেই পালিয়ে তাইওয়ানে চলে যেতে শুরু করেছে। এমনই এক হংকংবাসীর ভাষ্য, “স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র ছাড়া বাস করাটা জেল কিংবা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থাকার মতই ব্যাপার। স্বাধীনতা না থাকলে বরং (আমার) মরে যাওয়াও ভাল। তাইওয়ানে সে স্বাধীনতা দিতে পারবে। কারণ, তাদের গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয় এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষায় একটি সংবিধান আছে।”

যুক্তরাজ্য ১৯৯৭ সালে চীনের শাসনে হংকংকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে হংকংয়ে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার’ নীতি চলছে। তবে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাসহ কিছু ক্ষেত্রে সেখানে স্বাধীনতা আছে।

এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এ বাণিজ্য নগরীরতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বাস করে।