বহিঃসমর্পণ বিল: বিক্ষোভে অচল হংকং

বিচারের জন্য লোকজনকে চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে প্রস্তাবিত একটি বহিঃসমর্পণ বিলের বিরুদ্ধে হংকংয়ের হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2019, 04:39 AM
Updated : 12 June 2019, 08:36 AM

প্রতিবাদকারীরা বুধবার হংকংয়ের সরকারি দপ্তরগুলোর আশপাশের প্রধান প্রধান সড়কে অবস্থান নেওয়ায় শহরের অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থলটি অচল হয়ে পড়েছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সকাল থেকে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের দপ্তরের কাছে পূর্ব-পশ্চিমমুখি লাং ইউও সড়কে ও এর আশপাশে জড়ো হয়েছেন।

পরিস্থিতি সামলাতে হংকংয়ের ৭০ আসনবিশিষ্ট আইন পরিষদ বিতর্কিত এ বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে দ্বিতীয় দফার বিতর্ক স্থগিত করেছে।

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে এ বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা ছিল।

বিতর্কের নতুন সময় সদস্যদের পরে জানিয়ে দেয়া হবে, বলেছে আইন পরিষদ।

আগামী সপ্তাহেই এ বিলটি নিয়ে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

বেইজিংপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আইন পরিষদে এটি সহজেই পাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লামের দপ্তরের চারপাশে কয়েকশত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা বিক্ষোভকারীদের ‘আর অগ্রসর না হতে’ বলেছে।

এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ অর্থনৈতিক কেন্দ্রে সড়কে যান চলাচলে বাধা দেওয়ার জন্য কিছু প্রতিবাদকারী ব্যারিকেড তৈরি করেছে। পুলিশ তাদের সরে যেতে বললেও অনেকেই তা অগ্রাহ্য করছে। পরিস্থিতি অনেকটা ২০১৪ সালের শেষ দিকে গণতন্ত্রপন্থিদের ‘আমব্রেলা মুভমেন্টের’মতো হয়ে উঠেছে।

“বিলটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরছি না। ক্যারি লাম আমাদের অবমূল্যায়ন করেছেন। আমরা তাকে বিলটি পাস করতে দেবো না,” রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন কালো মুখোশ ও দস্তানা পরা এক বিক্ষোভকারী।

১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে চীনের কাছে হংকংয়ের হস্তান্তরের পর থেকে বিতর্কিত এই বিলটিকে কেন্দ্র করে রোববার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিক্ষোভ দেখেছে এশিয়ার এই অর্থনৈতিক কেন্দ্রটি, কিন্তু তারপরও প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী লাম।

বুধবার ভোররাত থেকেই হংকংয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য আসতে শুরু করে। শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও ধর্মঘট শুরু করার প্রস্তুতি নিতে থাকে।

প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে জনগণের উদ্বেগ প্রশমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লাম। তিনি জানিয়েছেন, তার প্রশাসন বিলটিতে অতিরিক্ত সংশোধনী এনে তাতে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করবে।

বুধবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেশিরভাগই তরুণ ও শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে বিবিসি।

হংকংয়ের ব্যবসায়ীরাও বহিঃসমর্পণ বিলের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

কর্মীদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে বুধবার শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের অফিসগুলো বন্ধ রাখারও ঘোষণা দেয়।

ধর্মঘটে শামিল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রায় চার হাজার শিক্ষকও।

প্রতিবাদকারীরা যেখানে জড়ো হয়েছেন তার চেয়ে ‘পাথর ছোড়া দূরত্বে’ আছে হংকং সাংহাই ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কিছু কোম্পানির কার্যালয়।

বিক্ষোভের মধ্যে এসব কোম্পানি বুধবার কর্মীদের কাজে যোগদানের নিয়ম শিথিল করতে রাজি হয়েছে, জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক অব ইস্ট এশিয়া ওই এলাকার কিছু শাখার কর্মকাণ্ডও বন্ধ রেখেছে।

সড়কগুলো অবরুদ্ধ থাকায় সরকারি কর্মচারীদের গাড়ি চালিয়ে সরকারি দপ্তরগুলোতে আসা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

বিরোধী আইনপ্রণেতা হুই চি ফাং এবারের বিক্ষোভের পরিণতি ২০১৪-র ‘আমব্রেলা আন্দোলনের’ মতো হবে না বলে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন।

“আমি আজকের এ প্রতিবাদকে অকুপাই আন্দোলনের মতো দেখছি না। সরকার বহিঃসমর্পণ বিলটি জোর করে পাস করতে চাইছে, এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে তরুণরা এখানে এসেছে,” বলেছেন তিনি।

২২ বছর আগে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় যুক্তরাজ্য শহরটির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল।

হংকংয়ের কারণেই চীনকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার’ নীতিতে চলতে হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যকে প্রতিশ্রুতি দিলেও নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত হওয়ার পর থেকেই বেইজিং হংকংয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কারে বাধা, স্থানীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও বিরোধীদের ওপর তুমুল দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের।

চীন শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

হংকংয়ের এ সপ্তাহের বিক্ষোভে ‘বিদেশি শক্তির ইন্ধন’ও দেখছে চীনের গণমাধ্যমগুলো।

“বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশি শক্তি চীনের ক্ষতি করতে চাইছে,” বলছে তারা।

হংকংয়ের ক্যাথলিক ডাইওসিস বিলটি নিয়ে ‘তাড়াহুড়া’ না করতে সরকারকে অনুরোধ করেছে। শহরটির জন্য খ্রিস্টানদের প্রার্থনা করতেও আহ্বান জানিয়েছে তারা।

সাম্প্রতিক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দেওয়া লামও ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

নির্যাতন, নির্বিচার ধরপাকড়, জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়, আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা এবং চীনের আদালতগুলো ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও হংকংকে এ বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে আর অগ্রসর না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

চীন তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।