অশান্তির ছায়ায় শেষ লোকসভা ভোট, বুথ-ফেরত জরিপে এগিয়ে মোদী

বড় কোনো অঘটন না ঘটলেও অশান্তির ছায়াতেই ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও চূড়ান্ত পর্বের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে আগামী ২৩ মে তে। তবে এরই মধ্যে দিল্লি ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দখলে যাওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বুথফেরত জরিপ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2019, 01:37 PM
Updated : 19 May 2019, 02:39 PM

‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’ চারটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, সব ক’টি জরিপেই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তাদের আসন সংখ্যা ২৮৭ থেকে শুরু করে ৩০৬ পর্যন্ত রয়েছে। অন্যদিকে, ৪ টি জরিপে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা দেখা গেছে, ১২৮ থেকে শুরু করে ১৩২ পর্যন্ত। আর অন্যান্য দলের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১২৭ থেকে ১০৪।

চূড়ান্ত ভোট পর্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি উত্তর প্রদেশের বারাণসী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। গত ছয় দফার মত সপ্তম দফাতেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোট ঘিরে গোলমালের খবর পাওয়া গেছে; বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে গন্ডগোল:

রোববার চূড়ান্ত পর্বের ভোট গ্রহণ শুরুর হওয়ার পর থেকেই যাদবপুর থেকে শুরু করে বসিরহাট পর্যন্ত বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে বলে জানায় আনন্দবাজার। কলকাতা উত্তর আসনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রার্থী রাহুল সিনহা ভোটের পরিস্থিতি দেখতে গেলে তৃণমূলকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায়।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও এদিন ভোট কেন্দ্রে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। যাদবপুর আসনে বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে তাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার এবং ভাংচুরের অভিযোগ করেছেন।

ওদিকে, ভাটপাড়ার নির্বাচনে রণক্ষেত্র হয়েছে কাঁকিনাড়ার কাটাপুকুর এলাকা৷ তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, বোমাবাজি হয়েছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীও লাঠি চার্জ করে৷ ভাটপাড়া বিধানসভা ভোট ঘিরে শুরু থেকেই টানাটান উত্তেজনা ছিল৷ শনিবার রাতেও কাঁকিনাড়া ছিল অশান্ত৷ তারই রেশ দেখা গেছে রোববারও।

কলকাতা দক্ষিণ আসনের কয়েকটি কেন্দ্রেও গোলমালের খবর পাওয়া গেছে। এবছর ভোটের প্রতিটি পর্বেই অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোদীর কথার লড়াই ভোটের পুরো সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছে।

উত্তর প্রদেশের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকেই লোকসভায় সবচেয়ে বেশি সদস্য যান। সাত দফা নির্বাচনের প্রতি দফায় পশ্চিমবঙ্গের কোনো না কোনো আসনে ভোট হয়েছে এবং প্রতিবারই রাজ্যটিতে ভোট ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। যে কারণে নির্বাচন কমিশন এখানের ভোট কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে।

পাঞ্জাব-বিহারে সংঘর্ষ:

পাঞ্জাব এবং বিহারেও এদিন ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষ হয়েছে। পাঞ্জাবে একটি ভোট কেন্দ্রে দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল, পরে আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

বিহারেও দুইটি ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষের কারণে সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। তাছাড়া, রাস্তার দাবিতে বিহারের নালন্দা জেলার চন্দোরা গ্রামের বাসিন্দারা ভোট বয়কট করে।  তারা ইভিএম এবং বিডিওর গাড়ি ভাংচুর করে।

বিজেপি’র বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ:

উত্তর প্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটারদের অর্থ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই এলাকার এক গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তাদের আঙুলে ভোটের কালি লাগানো ছাড়াও প্রত্যেকের হাতে টাকা গুঁজে দিয়েছে তিনজন। তারা তিনজনই বিজেপি’র লোক।

রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ। এরই মধ্যে বুথফেরত সমীক্ষা প্রধানমন্ত্রী মোদীর দলেরই বড় জয়ের আভাস দিয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন বুধ ফেরত জরিপের ফল অতীতে অনেক সময়ই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে অনেক সময় আবার এ জরিপ সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে সবাইকে বিস্মিতও করেছে। তাই ২৩ মে তে চূড়ান্ত ফলের আগ পর্যন্ত জরিপের এ ফল নিয়েই চলবে আলোচনা।

বুথফেরত জরিপ আদতে শুরু হয় প্রথম দফা ভোটের পরই। ভোট দিয়ে বেরনোর পর ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে কী ফল হতে চলেছে তার আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সবকটি দফার ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই ফল প্রকাশ করা হয় না। এ কারণে  বুথফেরত সমীক্ষার  কাজ ভোট শুরুর দিন অর্থাৎ, ১১ এপ্রিলেই শুরু হলেও তা সামনে আসছে এখন।