বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতায় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহের রোড শোয়ের সময় খ্যাতনামা বাঙালি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2019, 03:48 PM
Updated : 15 May 2019, 03:53 PM

ভারতের জাতীয় নির্বাচনে শেষ দফা ভোটের আগে মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় জাঁকজমকপূর্ণ রোড শো করেন। রোড শোয়ের সময় তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

ওই সময় একদল লোক বিদ্যাসাগর কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে ফেলে।

যার প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূল ছাত্রপরিষদ এবং তৃণমূলের ডাকে প্রতিবাদ মিছিল চলছে। প্রতিবাদ মিছিলে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তি প্রদানের দাবি জানানো হয়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছেন। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে তিনি বেলেঘাটা থেকে পদযাত্রা শুরু করেছেন, যা শ্যামবাজারে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

যদিও মমতার এই পদযাত্রা আগেই নির্ধারিত ছিল বলে জানায় আনন্দবাজার। কিন্তু আগে নির্বাচনী পদযাত্রা বলা হলেও এখন তা প্রতিবাদ পদযাত্রার রূপ নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের খ্যাতিমান মানুষেরা ওই প্রতিবাদ পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। সুধি সমাজ থেকেও এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

তৃণমূলের দাবি, রোড শো চলার সময় বিজেপি’র মিছিল থেকে বিদ্যাসাগর কলেজে হামলা চালিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। কলেজের অফিসেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাস থেকে তিনটি মোটরসাইকেল বাইরে টেনে এনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

তবে বিজেপির পাল্টা দাবি, অমিত শাহের রোড শো ছিল শান্তিপূর্ণ। রোড শো কলেজ স্ট্রিট দিয়ে যাওয়ার সময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদই প্রথমে অমিত শাহর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং কালো পতাকা দেখায়। তৃণমূল কর্মীরা মিছিলে ইট-পাটকেল ছোড়ে বলেও অভিযোগ বিজেপি’র।

তারপরই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয় শুরু হয়। বিজেপির দাবি, তৃণমূলকর্মীরাই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করে এখন বিজেপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেছে বিজেপি।

তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় পক্ষই নিজেদের দাবির পক্ষে বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তৃণমূলের এক নেতা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন জানিয়ে বলেন, নিজের দাবির পক্ষে তিনি ভাঙচুরের কয়েকটি ভিডিও জমা দিয়েছেন।

তৃণমূল ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্টও বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের প্রতিবাদে মিছিল করেছে।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, মূর্তি ভাঙচুর এবং সংঘর্ষের ঘটনায় কলকাতা পুলিশ অমিত শাহর বিরুদ্ধে জোড়াসাঁকো থানায় একটি মামলা করেছে। একই ঘটনায় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় আরো একটি মামলা হয়েছে। বিদ্যাসাগর কলেজের এক শিক্ষার্থী ওই মামলা করেছেন।

পাশাপাশি মঙ্গলবার দুপুরে লেনিন সরণিতে রোড শোয়ের প্রস্তুতি চলাকালীন নির্বাচন কমিশনের একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে কমিশন।

মূর্তি ভাঙচুর এবং সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বিজেপির কয়েকজন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলেও জানান আনন্দবাজার।

বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি পশ্চিম মেদিনীপুরের বীর সিং গ্রাম থেকেও মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতিবাদ এবং জড়িতদের অবিলম্বে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

আগামী ১৯ মে ভারতের জাতীয় নির্বাচনের শেষ দফায় ভোট গ্রহণ। ২৩ মে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে।