মানুষের কর্মকাণ্ডে বিপন্ন ১০ লাখ প্রজাতির অস্তিত্ব

আকাশ, পাতাল কিংবা সাগর- সবখানেই প্রকৃতির ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডের বিধ্বংসী প্রভাব ১০ লাখ প্রজাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন এমন কথাই বলছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2019, 02:06 PM
Updated : 7 May 2019, 02:06 PM

সোমবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। সবখানেই এমন দ্রুতগতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি ঘটছে যেমনটি আগে কখনো দেখা যায়নি।

এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে মানুষের খাবার ও জ্বালানির চাহিদা। যদিও চাইলে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তবে এর জন্য প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আন্তসম্পর্কের প্রতিটি পরতে পরতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন।

১৫ হাজার তথ্যসূত্র নিয়ে ৩ বছরের গবেষণা শেষে ১৮০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের 'ইন্টারগভার্নমেন্টাল সায়েন্স পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিস' । এরই ৪০ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপ ‘সামারি ফর দ্য পলিসিমেকার’ সোমবার প্রকাশিত হয়েছে প্যারিসে।

এতেই বলা হয়েছে, যে মৌমাছি পরাগায়ন করে সেই ক্ষুদ্র প্রাণীটি থেকে শুরু করে বন্যার পানি ধরে রাখতে সহায়ক বনাঞ্চল পর্যন্ত মানুষের কর্মকাণ্ডে কিভাবে ধ্বংস হয়ে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় প্রকৃতি সবসময়ই মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে দুর্ভোগ পোহিয়েছে। গত ৫০ বছরে তা আরো প্রকট হয়েছে। ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির পরিসর বেড়েছে চারগুণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেড়েছে ১০ গুণ।

বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে উদ্বেগজনক হারে ধ্বংস করা হচ্ছে বন,বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোতে। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে ১০ কোটি হেক্টর ক্রান্তীয় বন। মূলত দক্ষিণ আমেরিকায় গবাদি পশু চরানো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাম তেল উৎপাদনের কারণে এমনটি হয়েছে।

বিশ্বে এখন দ্রুতই নগরায়ণ হচ্ছে। ১৯৯২ সালের পর থেকে এখন নগরায়ণের হার দ্বিগুণ। মানুষের এমন কর্মকাণ্ডে আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হারে বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি।

বৈশ্বিক হিসেব অনুযায়ী, গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি এখন ঝুঁকির মুখে আছে। পতঙ্গের ক্ষেত্রে সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে বেশ কিছু এলাকায় তাদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবেই নজরে এসেছে এবং তা নথিবদ্ধ করা হয়েছে।

এসব নথিই প্রমাণ করছে যে, কয়েক দশকের মধ্যেই প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। আর এই বিলুপ্ত হওয়ার হার গত ১ কোটি বছরের গড় বিলুপ্তির হারের চেয়ে শত থেকে হাজার গুন বেশি।