বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, অ্যাপটির কর্মকৌশল খতিয়ে দেখে এর মাধ্যমে কীভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে তা বের করা হয়েছে।
পুলিশ এই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকদের আচরণ পর্যবেক্ষণ, সামাজিকীকরণের ঘাটতি, বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে কি না কিংবা বিদেশে কেউ পরিচিত আছে কি না তা নজরে রাখছে বলে জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ, খবর বিবিসির।
চীনের উইঘুরের মুসলিমদের ওপর সরকারি নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বেশ সোচ্চার।
জাতিসংঘ বলছে, চীন যে শিনজিয়াংয়ের ১০ লাখেরও বেশি উইঘুরকে আটকে রেখেছে, সে বিষয়ে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন আছে।
বেইজিং এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, উইঘুরদের আটক নয়, তাদের রাখা হয়েছে ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে’।
অ্যাপটির মাধ্যমে চীনা পুলিশ সাধারণ জনগণের তথ্য ও নথি রাখে বলে জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। এর মাধ্যমে যাদের দিকে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন এরকম ‘৩৬ ধরনের ব্যক্তিকে’ চিহ্নিত করা হয়।
সামনের দরজা কম ব্যবহার করেন এমন ব্যক্তি থেকে শুরু করে অস্বাভাবিক মাত্রার বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী এবং রাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া হজে যাওয়া মুসলিমরাও এ তালিকায় আছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
অ্যাপটির মাধ্যমে পুলিশ নির্দিষ্টভাবে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে কি না তার বিস্তারিত না বললেও ‘অননুমোদিত’ ইমাম ও ওহাবি মতবাদ অনুসরণ করেন এমন মুসলমানরা এ ‘৩৬ ধরনের’ মধ্যে আছেন বলে জানানো হয়েছে।
পুলিশের ওই অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য কেন্দ্রীয় নজরদারি ব্যবস্থাপনা ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনস প্ল্যাটফর্মে (আইজেওপি)পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এই আইজেওপির মাধ্যমেই শিনজিয়াংয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষের ওপর নজরদারি চলে, জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
“আইজেওপি হচ্ছে বেশি মানুষের নজদারিতে ব্যবহৃত বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যবস্থাপনা। এটি সড়কের চেকপয়েন্ট, গ্যাস স্টেশন, স্কুল- এসব জায়গা থেকে তথ্য নেয় এবং কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা প্রয়োজন এমন কোনো ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে,” বলেছেন মানবাধিকার সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ চীন গবেষক মায়া ওয়াং।
এইচআরডব্লিউর সঙ্গে তাদের অংশীদার জার্মানভিত্তিক নিরাপত্তা কোম্পানি ‘কিউর৫৩’ চীনা পুলিশের ব্যবহৃত ওই অ্যাপের কর্মকৌশল খতিয়ে দেখে।
শিনজিয়াংয়ে বিস্তৃত নজরদারির পাশাপাশি চীন দেশজুড়ে এরই মধ্যে ১৭ কোটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ আরও প্রায় ৪০ কোটি এমন ক্যামেরা বসানোরও পরিকল্পনা আছে দেশটির।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ক্যামেরা নজরদারি ব্যবস্থাপনা’ গড়ে তোলার অংশ হিসেবেই চীন এ সিসিটিভিগুলো বসাচ্ছে।
নাগরিকদের কর্মকাণ্ড ও মিথস্ক্রিয়াভিত্তিক একটি ‘সোশাল ক্রেডিট’ ব্যবস্থাপনা চালুর দিকে বেইজিং এগিয়ে যাচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে চীনের সবার তথ্য জড়ো করা হবে, থাকবে আর্থিক ও সরকারি সব তথ্য। ছোটখাট ট্রাফিক আইন লংঘন, কে কী পরিমাণ পানীয় খাচ্ছেন সব কিছুর ভিত্তিতে এ ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের র্যাঙ্কিংও করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।