মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণার পথে যুক্তরাষ্ট্র

মিশরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুডকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কাজ করছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2019, 08:00 AM
Updated : 1 May 2019, 08:00 AM

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে খবর বিবিসির।

“জাতীয় নিরাপত্তা দল ও ‍ওই অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে তার উদ্বেগ শেয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট। অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ ঘোষণার কাজ চলছে,” বলেছেন স্যান্ডার্স।

এপ্রিলে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরপরই হোয়াইট হাউস এ ঘোষণার পথে অগ্রসর হয়। মিশরের প্রেসিডেন্টই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম।

২০১৩ সালে ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের পর সিসি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। সিসির আমলেই মিশর মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র মিশরের সবচেয়ে পুরনো এ ইসলামি আন্দোলনভিত্তিক সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ অ্যাখ্যা দিলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলিম ব্রাদারহুডের ১০ লাখেরও বেশি সদস্যের ওপর অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে।

ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।

হোয়াইট হাউসের এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও নিজেদের ওয়েবসাইটে ব্রাদারহুড তাদের কাজ অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

“সমগ্র মানবজাতি এবং যে সমাজে আমরা বাস করি সেখানে উদার ও শান্তিপূর্ণ চিন্তাভাবনার সাহায্যে গঠনমূলক সহযোগিতা ও সততার লক্ষে আমরা আমাদের কাজে অবিচল থাকবো,” বলেছে সংগঠনটি।

ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার এ সিদ্ধান্ত হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দৃশ্যত এ সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিলেও জাতীয় নিরাপত্তা দলের অনেক কর্মকর্তা, সরকারি আইনজীবী ও কূটনীতিক কর্মকর্তারা আইনী ও নীতিগতভাবে এ পদক্ষেপের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন বলে খবর।

অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি পক্ষগুলোর দিক থেকেও একই ধরনের উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের গণতান্ত্রিকীকরণের প্রচেষ্টাকে পিছিয়ে দিবে এবং ওই অঞ্চলের অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোকে উদ্দীপনা যোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির এক মুখপাত্র, জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক ভিডিওতে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ফেলো শাদি হামিদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণা যে ভুল হতে যাচ্ছে এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা প্রায় সবাই একমত।

ইসলামি আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করা হামিদ বলেন, “প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মুসলিম ব্রাদারহুড সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজনকেও পাওয়া যাবে না, যিনি তাদেরকে সন্ত্রাসী ঘোষণায় সমর্থন দেবেন।” 

গত মাসে হোয়াইট হাউস ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড বাহিনীকে (আইআরজিসি) সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের সেনাবাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী’ অ্যাখ্যা দেয়।

দাতব্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মিশেলে বিশ্বব্যাপী তুমুল প্রভাবশালী হয়ে ওঠা মুসলিম ব্রাদারহুড ১৯২৮ সালে হাসান আল বান্নার হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়।

শুরুর দিকে ইসলামের নীতিনৈতিকতা ও ভালো কাজগুলোর প্রচার-প্রসারে মনোযোগী থাকলেও দ্রুতই এ সংগঠনটি ব্রিটিশ উপনিবেশের কবল থেকে মিশরকে মুক্ত করা ও সব ধরনের পশ্চিমা প্রভাব দূর করার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে।

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিশরের প্রেসিডেন্ট হুসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে ব্রাদারহুড ও এর সহযোগী দলগুলো পার্লামেন্টের প্রায় অর্ধেক আসন জিতে নিয়েছিল।