কেন শ্রীলঙ্কায় ‘আইএসের হামলা’ অপ্রত্যাশিত ছিল

শ্রীলঙ্কার ইস্টার সানডের হামলা অনেককেই হতবাক করেছে। এক দশকের মধ্যে এটিই দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2019, 08:31 AM
Updated : 25 April 2019, 08:31 AM

শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টান সম্প্রদায় ও বিদেশি পর্যটক, এই দুটি গোষ্ঠীকে হামলার লক্ষ্যস্থল করা হয়েছে। তিনটি শহরে চালানোর হামলাগুলো সমন্বিতভাবে প্রায় একযোগে চালানো হয়েছে। 

রোবারের এসব হামলার জন্য সোমবার ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত নামের স্বল্প পরিচিত স্থানীয় একটি ইসলামি গোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা। সম্ভবত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে গোষ্ঠীটি এসব হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য তাদের। এরপর মঙ্গলবার ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে।

হামলার জন্য তাওহীদ জামায়াতকে দায়ী করা ও আইএসের দায় স্বীকার; শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ই বিস্মিত হওয়ার মতো বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। 

এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় ইসলামি চরমপন্থার কোনো ইতিহাস নেই, সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের হয়রানির শিকার হওয়া ছাড়া এ ধরনের আর কোনো ঘটনার নজিরও নেই।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের শ্রীলঙ্কা বিষয়ক জ্যৈষ্ঠ বিশ্লেষক অ্যালান কিনান এক ইমেইলে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, “অন্য গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর কোনো ইতিহাস শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের নেই। সম্প্রদায় হিসেবে তাদের মধ্যপন্থি ও সংযত হিসেবেই দেখা হয়। কট্টরপন্থি বৌদ্ধ গোষ্ঠীগুলোর সহিংস হামলার মুখেও তাদের এ ভাবমূর্তিতে পরিবর্তন আসেনি।”

আর প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বিদেশি যোদ্ধা হিসেবে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়ার জন্য খুব বেশি সংখ্যক মুসলিম যুবক শ্রীলঙ্কা ছেড়ে যায়নি। 

সুফান সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষক কলিন ক্লার্ক ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদের হুমকি বিবেচনায় শ্রীলঙ্কা ওই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্ভবত নিচের দিকেই থাকবে, তারা প্রায় নজরদারির বাইরেই ছিল।”

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে যে যুদ্ধ ছিল সেখানে জাতিগত বিষয় থাকলেও তা ধর্মীয় ছিল না। রাষ্ট্র ও লিবারেশন টাইগার অব তামিল ইলম বা তামিল টাইগার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধের কারণ ছিল তামিলদের একটি জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা।

“এই ঝুঁকি কেন শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দৃষ্টিসীমার বাইরে ছিল, তার দিকে নজর দিতে গেলে গৃহযুদ্ধ ও বিদ্রোহের উত্তরাধিকারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে,” বলেন ক্লার্ক।

“যখন আপনি তামিল টাইগারদের মতো একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে ৩০ বছর ধরে যুদ্ধ করবেন- যে রকম অত্যাধুনিক সন্ত্রাসী সংগঠন এর আগে দেখিনি আমরা, এ তালিকায় আমি ইসলামিক স্টেটকেও যুক্ত করতে চাই- যখন আপনি এ ধরনের কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে ৩০ বছর ধরে যুদ্ধ করবেন, এর একটা বাড়তি প্রভাব আছে, বড় ধরনের প্রভাব আছে। দশ বছর পরও আপনি ওই হুমকির দিকেই বেশি নজর রাখবেন,” যোগ করেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল হিসেবে যতখানি অস্থিতিশীল, সে তুলনায় মুসলিম উগ্রবাদীদের সঙ্গে লঙ্কানদের যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে বেশ দুর্বল।

সৌফান সেন্টারের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছরে যেখানে ভারত থেকে ৭৫, পাকিস্তান থেকে সাড়ে ছয়শরও বেশি যোদ্ধা আইএসে যোগ দিতে গেছে, শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে মাত্র ৩২।

“আমরা আসলেই জানি না কতজন গিয়েছে, কতজন ফিরেছে। যদিও এ সংখ্যাটি মোটেও পাকিস্তানের মতো এত ব্যাপক নয়,” বলেছেন ক্লার্ক।

এমনকি এ সংখ্যা মালদ্বীপের চেয়েও বেশি নয়।

শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা যেখানে ২ কোটি ২০ লাখের কাছাকাছি, মালদ্বীপের সেখানে মাত্র ৪ লাখ ৪০ হাজার। সৌফান সেন্টারের ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইএসের যোদ্ধাদের মধ্যে মালদ্বীপের ২০০জন ছিলেন।

“আমার সঙ্গে কথা হওয়া কূটনীতিক ও মুসলিম নেতারা অন্যান্য দেশ বিশেষ করে মালদ্বীপের মুসলমানদের নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছিলেন। এদের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হতো, এরা শ্রীলঙ্কায়ও ছিলেন; যদিও তাদেরকে লঙ্কানদের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হতো না,” লিখেছেন কিনান।

“আরও খতিয়ে দেখলে হয়তো এর পরিবর্তন জানা যেত। গত চার বছর ধরে যখনই কেউ ধারাবাহিকভাবে মুসলিম নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের আইএসের ঝুঁকি নিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, তাকে বলা হয়েছে- বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং কোনো বড় ধরনের ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে না। আমার ধারণা, এখন এই সংশ্লিষ্টতার কথা জেনে প্রায় সবাই বিস্মিত হয়েছেন। যদিও এই যোগাযোগ একেবারেই সাম্প্রতিক সময়ের বলেই অনুমান করা হচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।