প্রথম শীর্ষ বৈঠকে পুতিন-কিম

প্রথমবারের মতো শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টে ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2019, 06:00 AM
Updated : 25 April 2019, 07:52 AM

বৃহস্পতিবার রাশিয়ার দূর প্রাচ্যের বন্দর শহর ভ্লাদিভস্তকের কাছে রাস্কি দ্বীপে তারা পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

দুই নেতা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

এর আগে চলতি বছরের প্রথমদিকে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেছিলেন কিম। কিন্তু তাদের বৈঠক কোনো সমঝোতায় পৌঁছানোর আগেই ভেস্তে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর কিম এখন রাশিয়ার সমর্থন চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শীর্ষ বৈঠক শুরুর আগে পুতিন ও কিম দুই দেশের দীর্ঘদিনের মৈত্রী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করারও প্রতিশ্রুতি দেন।

“কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব এবং এ ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় রাশিয়া কীভাবে সাহায্য করতে পারে আপনার (কিম) আজকের সফর তা বুঝতে আমাদের সহায়তা করবে,” বলেন পুতিন।

কিম তার ‍বক্তব্যে ‘ভ্লাদিভস্তকের বৈঠক’ দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

“দীর্ঘদিনের মিত্রতা ও ইতিহাস আছে দুই দেশের, (এ বৈঠক) একে আরও স্থিতিশীল ও চমৎকার জায়গায় নিয়ে যাবে,” বলেন উত্তর কোরিয়ার এ শীর্ষ নেতা।

কিম বুধবার ট্রেনে চেপে ভ্লাদিভস্তকের কোয়ায়সাইড স্টেশনে এসে পৌঁছালে রুশ কর্মকর্তারা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

গাড়িতে ওঠার আগে উত্তরের এ শীর্ষ নেতাকে ব্যান্ডের মূর্চ্ছনায় বরণ করে নেওয়া হয়। রাস্কি দ্বীপে রওনা হওয়ার সময় কিমের দেহরক্ষীরা তার গাড়ির সঙ্গে দৌড়ে কিছুদূর এগিয়ে যান।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে কিমের গাড়ি রওনা হওয়ার শুরুর দিকে তার দেহরক্ষীদের এভাবে দৌড়ানের চিত্র বেশ পরিচিত।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাশাপাশি রাশিয়ারও অস্বস্তি আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

২০০৩ সাল থেকে শুরু হওয়া ছয় জাতির আলোচনাকেই ক্রেমলিন কোরীয় উপদ্বীপের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে সমাধান খোঁজার সবচেয়ে কার্যকর উপায় মনে করে, বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

দুই কোরিয়া, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ওই আলোচনা আপাতত বন্ধ আছে।

“এ মুহুর্তে এর (ছয় জাতি বৈঠক) বাইরে কার্যকর আর কোনো আন্তর্জাতিক কর্মকৌশল নেই,” বুধবার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পেসকভ এমনটাই বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর উত্তর কোরিয়ার প্রতি এখনো যে মিত্রদের শক্তিশালী সমর্থন আছে, কিমের এবারের সফর তা দেখানোর সবচেয়ে ভালো সুযোগ, বলছেন পর্যবেক্ষকরা।

ফেব্রুয়ারির ওই হ্যানয় বৈঠক সমঝোতা ছাড়াই শেষ হওয়ার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে দায় দিয়েছে পিয়ংইয়ং। সাবেক এ সিআইএ প্রধানকে ভবিষ্যৎ উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার বাইরে রাখার দাবিও জানিয়েছে তারা।

পিয়ংইয়ং যে তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই নির্ভর করছে না, পুতিন-কিম বৈঠকে তা দেখানোরও সুযোগ থাকছে।

এবারের সফরে কিম নিষেধাজ্ঞা সহজ করতে মস্কোকে চাপ দিতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

কোরীয় উপদ্বীপে রাশিয়া যে এখনো ‘গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়’ পুতিন-কিম বৈঠকের মাধ্যমে তা দেখানোর সুযোগ থাকছে মস্কোরও।

রুশ প্রেসিডেন্ট এর আগেও কয়েকবারই উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। যদিও দুই দফা ট্রাম্প-কিম সম্মেলনে মস্কোর অবস্থান  ছিল সাইডলাইনে।

স্নায়ু যুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম মিত্র।

১৯৯১ সালে সোভিয়েতের ভাঙনের পর পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক সংকুচিত হলে উত্তর কোরিয়াকে চীনের দিকে ঝুঁকতে দেখা যায়।

পুতিনের হাত ধরে অর্থনৈতিক খাত অনেকাংশে পুনরুদ্ধারের পর ২০১৪ সালে রাশিয়া ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ নিদর্শন স্বরূপ উত্তর কোরিয়ার সোভিয়েত আমলের ঋণের অধিকাংশই মাফ করে দেন।